নিউজ ডেস্ক, এটিভি সংবাদ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই বাংলাদেশের জনগণ ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরে পেয়েছে। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) শহীদ ছাত্রনেতা সেলিম ও দেলোয়ারের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন-সংগ্রামে সেলিম ও দেলোয়ারসহ যারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, তাদের রক্তের ঋণ কখনও শোধ হবার নয়। দীর্ঘ সংগ্রাম ও অনেক তাজা প্রাণের বিনিময়ে অবশেষে স্বৈরশাসকের পতন ঘটে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের জীবনকে বিপন্ন করে বাঙালি জাতির জন্য একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর শূন্য হাতে তিনি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন, যখন ব্যাংকে কোনো রিজার্ভ মানি ছিল না এবং কোনো কারেন্সি নোট ছিল না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক-বাহিনী ২৭৮টি রেল ব্রিজ এবং ২৭০টি সড়ক সেতু ধ্বংস করে, দুটি সমুদ্র বন্দরে মাইন পুঁতে এবং রাস্তা-ঘাটসহ সমস্ত স্থাপনা ধ্বংস করে রাখে। বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশের অর্থনীতিতে রেকর্ড ৯ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় এবং জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি প্রদান করে।
সরকারপ্রধান বলেন, জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গ্লানিকর যে, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট পাকিস্তানিদের এ দেশীয় দোসরদের হাতে আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের প্রায় সব সদস্য প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। যার ফলে বাঙালিরা তাদের আত্মমর্যাদা হারিয়েছিল, হারিয়েছিল আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং সেই সঙ্গে তাদের সোনালি ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের সব সম্ভাবনা। বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর স্বৈরশাসকেরা সঙ্গিনের খোঁচায় এ দেশের মানুষের ভাগ্য লিখতে শুরু করেছিল। আমরা দুবোন বিদেশে থাকার কারণে আমাদের তারা হত্যা করতে পারেনি। দীর্ঘ ছয় বছর আমাদের বিদেশের মাটিতে রিফিউজি হিসেবে অবস্থান করতে হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে এসেই এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য লড়াই-সংগ্রাম শুরু করি। দেশে স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেই। বাঙালিরা বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে, স্বাধিকার আন্দোলনে আত্মোৎসর্গ করেছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কত তাজা প্রাণ ঝরে পড়েছে তার হিসেব নেই। ১৯৮৪ সালের এ দিনেও ছাত্রলীগ নেতা এইচ. এম. ইব্রাহিম সেলিম এবং কাজী দেলোয়ার হোসেনের রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল। আমি তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
সরকারপ্রধান বলেন, সেদিন শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের স্বৈরাচারবিরোধী মিছিলে অসংখ্য ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সংহতি প্রকাশ করে যোগ দিয়েছিলেন। মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিলটি শুরু হয়েছিল, যার সামনে এবং পিছনে ছিল পুলিশের ট্রাক। মিছিলটি যখন ফুলবাড়িয়ার নিকট পৌঁছায়, ঠিক তখনি স্বৈরাচার সরকারের নির্দেশে মিছিলের ওপর পেছন থেকে ট্রাক চালিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলেই ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে শাহাদৎবরণ করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন আবাসিক ছাত্র পটুয়াখালি জেলার বাউফলের সেলিম এবং পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়ার দেলোয়ার।
এছাড়া ক্ষত-বিক্ষত ও আহত অবস্থায় পড়েছিলেন অসংখ্য ছাত্র এবং আমাদের দলীয় নেতাকর্মীরা। তাদের এ মহান আত্মত্যাগ তৎকালীন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের দুর্বার আন্দোলনকে আরও বেগবান করেছিল।