এক বাতিঘরের নাম “অমর্ত্য পাঠশালা”

আরিফুল ইসলাম, রংপুর
শেরমস্ত নদীরপাড় গ্রামে গড়ে ওঠা শিক্ষার এক বাতিঘরের নাম “অমর্ত্য পাঠশালা। গ্রামটিতে ভ্যান-রিক্সা-দিনমজুর মানুষের সংখ্যা বেশি। কাজ না থাকায় কর্মহীন হয়ে বাচ্চাদের লেখাপড়াও করাতে পারেন না ঠিকমত। পুষ্টিহীনতায় ভোগা শিশুর সংখ্যাও অনেক। এ অবস্থায় অমর্ত্য ফাউন্ডেশন নিজস্ব অর্থায়নে একটি পাঠশালা গড়ে তোলেন। যেখানে ফ্রি পড়ালেখা, বই-খাতা, কলম-ব্যাগ ও একবেলা পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা আলমপুর ইউনিয়ানে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শেরমস্ত নদীরপাড় গ্রামের মানুষ বেশির ভাগ রিক্সা চালায় কেউবা ইটভাটা ও কল কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখন কাজ না থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়ছে ওই গ্রামের মানুষ। ছোট্ট শিশু মনিদের পড়ালেখা চালাতে পারছেন না, পুষ্টিকর খাবারে ভুগছেন ওই এলাকার শিশুরা। এমন অবস্থা দেখে অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী ফজলুল বারী (৪০) “অমর্ত্য  ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায়  শিশু শিক্ষাথীর বিনামূল্যে পড়াশোনার ভিত্তি তৈরি করেন। একবেলা সুষম আমিষ জাতীয় খাদ্য (মাছ/মাংস /ডিম ও সবজি  খাওয়ানোসহ খাতা,কলম, পেন্সিল, রাবার, ব্যাগ ও ঈদের সময় নতুন জামা-কাপড় দিয়ে থাকে। ২০২২ সালে ১৬-১৭ জন স্কুল শিক্ষাথী নিয়ে ফ্রি পাঠশালাটির যাত্রা শুরু। দিন দিন সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে ৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদানে দায়িত্বপালন করছেন নিপা রাণী (১৮) নামের একজন নারী শিক্ষিকা।
কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা জানায়, বই খাতা কলম ব্যাগ জামাকাপড়সহ ফ্রি পড়াশোনা ও দুপুরে ভাতের সাথে আমিষ জাতীয় খাবার পেয়ে আনন্দে আত্বহারা । এসময় প্রতিষ্ঠানটিতে ভাল লেখাপড়ার হওয়ার কথা প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা।
দায়িত্বরত শিক্ষিকা নিপা রাণী বলেন, আমার বাড়ির উঠানে চট, রস্তা বিছিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াই। বৃষ্টি বাদলের কারণে এখন নিজের ঘরে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করানো হয়। ঘরটি ছোট্ট হওয়ায় শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে কষ্টে লেখা পড়া চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, সরকারি বেসরকারি স্কুলে ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা চালাতে টাকার প্রয়োজন হয়, গ্রামের ভিতরে অমর্ত্য ফাউন্ডেশন নিজস্ব অর্থায়নে একটি পাঠশালা তৈরী করেন। এখানে পড়ালেখাসহ টিফিনের সময় ভাত খেতে হয়না টাকার প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকের দায়িত্বনেন চন্দন রায়।এমন উদ্যেগ দেখে ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠায় ওই এলাকায়, ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম (৪০) দেখতে জান। বিনামূল্যে পড়া লেখা আর আমিষ জাতীয় খাবার দেওয়ায় তারাগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে অমর্ত্য পাঠশালা গড়ে উঠার কথা বলেন।
অভিভাবকরা বলেন, আমাদের ছেলে মেয়েকে আমরা তিনবেলা খাওয়াতে পারিনা, পড়ালেখা করাতে পারিনা। অমর্ত্য  ফাউন্ডেশনে আমাদের সন্তানরা পড়ছে, এখানে ভালো পড়ালেখা হয়। আগে অন্য স্কুলে পড়তো কিছুই বলতে পারতো না, এখানে অনেক কিছু বলতে পারে।  স্কুলে ভাতের সাথে আমিষ জাতীয় খাবার দেয় আমরা খুব খুশি।
অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসি ফজলুল বারি জানান, আমি অনেক দিন ধরে বিদেশে আছি। আমার বন্ধুর কাছে জানতে পারি নদীরপাড় গ্রামে কোমলমতি শিশুরা পুষ্টির অভাবে ভূগছেন, পড়ালেখা করতে পারছেনা। আমি নিজস্ব অর্থায়নে এলাকাবাসির সহযোগীতায় অমর্ত্য পাঠশালা চালু করি। ফ্রি পড়ালেখার পাশাপাশি ভাত ও আমিষ জাতীয়  খাবার দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, শিক্ষার এক বাতিঘরের নাম “অমর্ত্য পাঠশালা, ফ্রিতে চলে পড়ালেখা। দীর্ঘ এক বছর ধরে ফ্রিতে বাচ্চাদের  লেখাপড়া করানো হয়। সরকার এবং শিক্ষা অফিসের সহয়তা পেলে প্রতিষ্ঠানটি (অমর্ত্য ফাউন্ডেশন নামের পাঠশালা) সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
https://youtu.be/CyX6rbWV-2Y