অনলাইন ডেস্ক, এটিভি সংবাদ :
গর্ভবতীরা রোজা রাখতে পারবেন কি না তা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। বিশেষ করে গর্ভবতী মা এবং তার অনাগত সন্তানের সুস্থতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন আপনজনেরা। এই বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফরিদা ইয়াসমিন সুমি গণমাধ্যমে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
গর্ভবতীর সঠিক পুষ্টিপ্রাপ্তির ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে গর্ভস্থ শিশুর মেধা বিকাশ ও বেড়ে ওঠা। এ সময় রোজা রাখা যাবে কি না, তা নির্ভর করছে হবু মা ও তার গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতার ওপর। মা ও শিশু উভয়ে যদি সব দিক থেকে স্বাভাবিক থাকে, তবে মা ইচ্ছা করলে রোজা রাখতে পারবেন। ইসলাম ধর্মে গর্ভবতীর রোজা রাখার ওপর শিথিলতা রয়েছে।
গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও জটিল সময়। এ সময় শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠিত হয়। তাই শরীরে সঠিক মাত্রার পুষ্টি উপাদান সরবরাহ জরুরি। তা ছাড়া এ সময় বমিভাব, খাবারে অরুচি, ক্লান্তি ও ওজন কমে যাওয়াসহ বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। তাই গর্ভের প্রথম তিন মাস রোজা না রাখাই ভালো।
মধ্যবর্তী ৩ মাস এ সময় শিশুর গঠন সম্পূর্ণ হয়ে যায়। প্রথম তিন মাসের উপসর্গগুলো কাটিয়ে মা অনেকটা ভালো বোধ করেন এবং জীবনযাপনেও স্বাভাবিকতা ফিরে আসে। মা ও শিশুর অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা না থাকলে এ সময় মায়ের রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই। তবে তার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
গর্ভকালীন শেষ তিন মাস প্রথম তিন মাসের মতো বেশ স্পর্শকাতর সময়। এ সময় শিশুর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে, তাই সঠিক নিয়মে খাওয়া-দাওয়া ও পুষ্টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোজা না রাখাই ভালো। যেকোনো গর্ভবতীই রোজা রাখার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে নেয়া উচিত।
রোজা রাখলে গর্ভবতীদের যেসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে- দুশ্চিন্তামুক্ত ও প্রশান্ত থাকতে হবে,বিশ্রামের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে হবে,পরিশ্রম কমিয়ে দিতে হবে,বেশি হাঁটাহাঁটি করা যাবে না,ভারী কিছু বহন করা যাবে না,ইফতার ও সাহ্রিতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, সেহরি-ইফতার ও রাতের খাবারের পুষ্টিমান ও গুণাগুণের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে, রাত জাগা যাবে না,দিনে দুই ঘণ্টা বিশ্রাম ও রাতে আট ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।
যেসব লক্ষণ দেখা দিলে জরুরি চিকিৎসা নিতে হবে- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়ার পরেও ক্লান্ত ভাব বা দুর্বল লাগলে,গর্ভে সন্তানের নড়াচড়া কমে গেলে,বমি ও মাথাব্যথা হলে,তলপেটে ব্যথা অনুভব করলে,জ্বর জ্বর লাগলে,ঘনঘন প্রস্রাব হলে বা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করলে,গর্ভের শিশুর ওজন না বাড়লে,পাতলা পায়খানা হলে ও কোষ্ঠকাঠিন্য হলে।
গর্ভাবস্থায় পুরোপুরিভাবে মায়ের ওপর নির্ভরশীল থাকে শিশুর জীবন। তাই এ সময় আবেগ বা খেয়ালের বশে কোনো কিছু না করে সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। মা ও শিশু উভয়ে যদি সুস্থ-সবল থাকে, তাহলে রোজা রাখা যাবে। তবে এই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।