গোবিন্দগঞ্জের দুর্নীতিবাজ ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম জর্জ

অনুসন্ধানী প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ 

জ্বিনের বাদশা সিন্ডিকেটের গডফাদার 

গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানাধীন রয়েছে ১৭টি ইউনিয়ন। তারমধ্যে ৬ নং দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদ একটি। ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে সবচেয়ে বড় এলাকা হিসেবে দরবস্ত ইউনিয়নটি। প্রায় ৭৫ হাজার জনসংখ্যার ইউনিয়নটিতে ভোটার সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার।

এতো বড় এলাকা, যেখানে এতো জনসংখ্যা সেখানে সরকারের অনুদানও অনেক বেশী হওয়া সত্ত্বেও ইউনিয়ন এলাকায় কোনো উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়নি।

দেশ, জাতি ও গণমানুষের স্বার্থে বলতে হয়- বিষয়টি অনেকেই জানেন, মোবাইল ফোনে গভীররাতে যখন ফোন আসে বিপরীত প্রান্ত থেকে বলে ওঠে আমি জ্বিনের বাদশা বলছি- তখন অনেকেই হতভম্ব হয়ে পড়েন এবং জ্বিনের বাদশার কথামত সবকিছু দিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান। যে বিষয়ে বহুবার প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় দেখানো হলেও এখন পর্যন্ত হয়নি তার সঠিক সমাধান।

সমাধান হয় কি করে? সরিষার মধ্যেই লুকিয়ে আছে ভূত! জানলে অবাক হবেন, জ্বিনের বাদশা সিন্ডিকেটের গডফাদার উল্লেখিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ র ম শরিফুল ইসলাম জর্জ। একদিকে সরকারের প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছেন, অন্যদিকে জ্বিনের বাদশা সিন্ডিকেট থেকে বড় অংকের অর্থের জোগান পাচ্ছেন এই দুর্নীতিবাজ ইউপি চেয়ারম্যান।

উল্লেখিত বিষয়টি নিয়ে এটিভি সংবাদ থেকে চেয়ারম্যানের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে (০১৭১৬-০৬৩৯১৯) বার বার কথাবলার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি তাকে।

আমাদের অনুসন্ধানে আজকে তুলে ধরবো কিঞ্চিত দুর্নীতি। ইউপি চেয়ারম্যান আ র ম শরিফুল ইসলাম জর্জ প্রথমবারে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হলেও দ্বিতীয়বারে নৌকা প্রতীক পেয়ে গায়ের জোরে ভোট চলাকালীন সময়ে ভোট কেটে নিয়ে এখন তিনি ইউপি চেয়ারম্যান। লজ্জার বিষয় হলেও নির্লজ্জ বেহায়া চেয়ারম্যানের হয়নি কোনো লজ্জা।

২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ইউনিয়ন এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়নে সরকার থেকে বরাদ্দকৃত প্রায় ১০০০ (এক হাজার) মেট্রিকটন চাল আত্মসাৎ করেন, চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম জর্জ। অথচ এক টাকারও উন্নয়ন হয়নি ইউনিয়নটিতে। অনুসন্ধানে জানা যায়, চেয়ারম্যানের এ সকল অপকর্মে সহযোগীতা করেন বর্তমান স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মনোয়ার হোসেন চৌধুরী ও দুর্নীতিবাজ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সরকারের নির্ধারিত ১০ টাকার চাল চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম জর্জ তার পছন্দের ডিলার নজরুল, সামসুল ও সুজনের মাধ্যমে দিতো। তদন্তে নজরুল ও সামসুলের কাছ থেকে প্রায় ৩০০ জনের নামের কার্ড (তালিকা) পাওয়া যায়, অথচ তাদের নামে ১০ টাকা কেজিদরের চাল বরাদ্দ না করে তা আত্মসাৎ করতো চেয়ারম্যান। ভয়াবহ এ সকল দুর্নীতির নেপথ্যে একমাত্র চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম জর্জ।

এতোকিছুর পরও থেমে থাকেনি চেয়ারম্যানের দুর্নীতি। ইউনিয়নের প্রায় ১৩ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশ দিয়ে লাগানো ছিলো প্রায় ২০ হাজারের মত ইউক্লিপটাস গাছ। এলাকার শোভাবর্ধন করছিলো এ সকল গাছ। অথচ সরকারী এ সকল গাছ টেন্ডার ছাড়াই কেটে ফেলেন এ দুর্নীতিবাজ। প্রায় ১০ হাজারের মত গাছ কেটে হজম করেও ফেলেছেন তিনি। ইউপি চেয়ারম্যানের এ সকল অপকর্মের সাথে সম্পৃক্ত আছেন বলে জানা যায়, বর্তমান গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মণ।

আমাদের প্রত্যাশা বর্তমান সফল সরকার তথা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন, অন্যথায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নসহ গোটা বিষয়টি হবে প্রশ্নবিদ্ধ।

এটিভি সংবাদের অনুসন্ধানী কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এ সকল দুর্নীতির নেপথ্যে যারা কাজ করছে- আমরা তাদের মুখোশ উম্মোচন করবো অচিরেই দেশ, জাতি ও গণমানুষের স্বার্থে।