
এস এম জামান, এটিভি সংবাদ
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। সত্যি বলতে, ফেব্রুয়ারি এলেই বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের আদিখ্যেতা বেড়ে যায়। আর বাকি এগারো মাস তথৈবচ। ইংরেজি উচ্চারণ-রীতিতে বাংলা বলাটাই এখন চল। দিন দিন এটাতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা। সেই সঙ্গে বাড়ছে অশুদ্ধ ও বিকৃত বাংলা বানানের ব্যবহার। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাড়ছে অশালীন শব্দের ব্যবহার।
একদিকে যেমন ইংরেজি ভাষার প্রতি গুরুত্ব বাড়ছে, তেমনি অন্যদিকে বাড়ছে বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা। যেখানে ইংরেজি কেবল একটি যোগাযোগের মাধ্যম, সেখানে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এটি গোটা একটা বিষয়। ১২ বছর ধরে এত ইংরেজি পড়েও উচ্চশিক্ষার জীবনে পা রেখে অনেক শিক্ষার্থী ঠিকভাবে ইংরেজি বলতে পারে না। আবার, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সুবাদে এখন শিশুরাও গড়গড় করে ইংরেজি বলতে পারে। এমনকি অনেক শিশু ইংরেজিতে এতটাই দক্ষ হয়ে ওঠে যে বাংলা শেখাই হয়ে ওঠে না তাদের। আর বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলোতে ইংরেজি তো পরের কথা, শুদ্ধ বাংলা শেখার ওপরেও গুরুত্বারোপ করা হয় না। দিনশেষে দেখা যায়, আমরা না পারি ইংরেজি, না পারি শুদ্ধ বাংলা। এ সবকিছুর জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকেই দায়ী করতে চাই।
শুদ্ধ বাংলা শেখার ওপর গুরুত্ব বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনই পারে বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা দূর করতে। বর্তমানে উপন্যাস, গল্প, কবিতায়ও শুদ্ধ বাংলাচর্চার ঘাটতি দেখা যায়। সেজন্য লেখকদেরও ভাষাচর্চায় আরও বেশি যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। বাংলা ভাষা যেভাবে বিকৃত হচ্ছে, তাতে ভাষার প্রতি সম্মান শূন্যের কোঠায় নেমে যাচ্ছে। তাই বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষার্থে অবিলম্বে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভাষার সম্মান রক্ষার্থে সচেতন হতে হবে এবং অন্যকেও শুদ্ধ বাংলা ভাষাচর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পরবর্তী প্রজন্ম কে শুদ্ধ বাংলা শেখানো এবং বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা জাগ্রত করার মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে পারি ভাষার সঠিক ব্যবহার।
মনে রাখতে হবে, বাংলা আমাদের গর্বের ভাষা, স্বকীয়তা ও মর্যাদা রক্ষার ভাষা। আমরা সবাই নিশ্চয়ই আমাদের মাতৃভাষাকে ভালোবাসি। তাই বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের নিজেদেরই। তাই আসুন একটু ভেবে দেখি, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে নিজের অজান্তেই আমরা প্রাণের বাংলা ভাষার প্রতি অসম্মান করছি কিনা? ঠিক কতটা ভালোবাসা থাকলে ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া যায়? আর ভাষা শহীদদের উত্তরসূরি হয়ে আমরা কী করছি? মাতৃভাষার প্রতি দেখানো আবেগটা যেন কেবল ২১ ফেব্রুয়ারির জন্য না হয়।
