অনুসন্ধানী প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ
টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের গজারি বন ভেদ করে চলে গেছে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়ক। যারা যানবাহনে জলছত্র-রসুলপুর পর্যন্ত পারাপার হন, তারা সড়কের উভয় পাশের ঝোপজঙ্গল দেখে বিমুগ্ধ হন। কিন্তু কেউ যদি কৌতূহলী হয়ে জঙ্গলের গভীরতা দেখার জন্য সড়ক থেকে ১০০ কদম ভেতরে যান তাহলে রীতিমতো হতাশ হবেন। সেখানে বনজঙ্গলে অস্তিত্ব নেই।
যতদূরে চোখ যায় কলা, আনারস আর পেঁপে বাগান। মাঝে ধানি জমি, নয়তো আদা, হলুদ বা সবজিখেত। ইদানীং গড়ে উঠছে অবৈধ ঘরবাড়ি। পাঁচ বছর আগের সেই নির্জন বনে এখন ট্রাক্টরের রাজত্ব। বিকট শব্দে সংরক্ষিত বনভূমির বুক চাষ হচ্ছে লাঙলের তীক্ষ্ণ ফলায়। বনভূমিকে ঘিরে অবৈধ জনবসতি, জবরদখল আর কৃষি খামারের মহাযজ্ঞ। জানা যায়, বনাঞ্চলের জাতীয় সদর উদ্যান, দোখলা, অরনখোলা ও চাড়ালজানি রেঞ্জের ৪৫ হাজার একর বনভূমির তিন-চতুর্থাংশই এখন বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কেউ কেউ ৫০০-৬০০ একর বনভূমি জবরদখলে নিয়ে কৃষি খামার, পর্যটনকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বাংলো ঘর তুলেছেন। অনেকেই জবরদখলি জমি বহিরাগত মহাজনকে লিজ দিয়েছেন।
গারো সংবাদকর্মী অ্যাডওয়ার্ড প্রিন্স অভিযোগ করেন, বিগত পাঁচ বছরে গজারি বন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছ পাচারের পর উজাড় বনভূমি জবরদখলে নিচ্ছেন প্রভাবশালীরা। চাড়ালজানি বিটের উত্তর ও দক্ষিণ জাঙ্গালিয়া, বেড়িবাইদ বিটের পঁচাচোনা, বিমানঘাঁটির দক্ষিণ জঙ্গল, রাজাবাড়ী বিটের গেইচ্চা, দোখলা সদর বিটের ম্যাগিচোরা বাইদ, ফেকামারি, চুনিয়া পূর্ব, জয়নাগাছা ও গাছাবাড়ী বিটের পূর্বাংশ থেকে প্রতি দিনই গজারি নিধন, পাচার এবং বনভূমি বেহাত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এনজিও কর্মী নজরুল ইসলাম জানান, তিন দশকে বনাঞ্চল রক্ষায় দেশি-বিদেশি অর্থায়নে ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। একেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় আর কিছু বন সাফ হয়। বিশ্ব ব্যাংকের বিপুল অর্থায়নে গৃহীত ‘সুফল প্রকল্প’ গজারি বনে সুফল বয়ে আনেনি। স্কুল-শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, সুফল প্রকল্পে বড় গাছের ছায়ার নিচে ছোট চারা রোপণ হয়। বড় গাছের ছায়ায় যে ছোট চারা মাথা তুলতে পারে না সেটি বনের রাখাল বালকরা বুঝলেও বনকর্মীরা বোঝেনি।
দোখলা রেঞ্জ অফিসার আব্দুল হামিদ জানান, বন রক্ষায় সাধ্যমতো চেষ্টা চলছে। প্রভাবশালীরা এর বাধা। জবরদখলা করা জমি পুনরুদ্ধার করে সামাজিক বনায়ন হচ্ছে। মধুপুর বনাঞ্চলের সহকারী বন সংরক্ষক আশিকুর রহমান জানান, সুফল প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষয়িষ্ণু গজারি বন সমৃদ্ধ করা হয়েছে। সামাজিক বনায়নের অংশীজনরা হালচাষ করে গাছের চারার সঙ্গে জমিতে ফসল আবাদ করেন। এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে তার জানা নেই।