তিন দিনে ৮ লাশ উদ্ধার, নববধূ পূর্ণিমা এখনো নিখোঁজ


স্টাফ রিপোর্টার:
রাজশাহীতে পদ্মায় নৌকাডুবির ঘটনায় প্রথম দিন একটি, দ্বিতীয় দিন পাঁচটি এবং তৃতীয় দিন দুইটি লাশসহ দ্বিতীয় নৌকা উদ্ধার হলেও এখনো উদ্ধার হয়নি নববধূ সুইটি খাতুন পূর্ণিমা। রবিবার দুপুর দেড়টার দিকে নববধূর ফুপাতো বোন, অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার স্বর্ণা (১২) এবং দুপুর পৌনে ৩টার দিকে চাচী আখি খাতুনের (৩০) লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দ্বিতীয় নৌকা উদ্ধার করেন ডুবুরিরা। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ৯ জনের মধ্যে ৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

নববধূর সঙ্গে একই নৌকায় ছিলেন আত্মীয় টুলু বেগম (৩০)। রবিবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘গায়ের শাড়ি খুলে ফেলে একটি চরাট ধরে ভাসছিলাম। এ সময় দেখি সুইটি হাবুডুবু খাচ্ছে। কপালের টিকলি দেখে তাকে চিনতে পারি। বাঁচার জন্য তিনি সুইটিকে কাপড় খুলে ফেলতে বলি। সুইটি কাপড় খোলার চেষ্টা করতে যাচ্ছিল। পরক্ষণেই তাকিয়ে দেখি সুইটি আর নেই।’

জানা যায়, কনে সুইটি খাতুনের বাবা শাহীন আলী একজন ট্রাক শ্রমিক। বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার ডাঙ্গেরহাট গ্রামে। বর আসাদুজ্জামান রুমন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়। তার বাড়ি উপজেলার চরখানপুর গ্রামে। গ্রামটি পদ্মা নদীর ওপারে। শুক্রবার বরের বাড়িতে বউভাতের অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে সন্ধ্যা ৭টার দিকে নৌকাডুবির মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

টুলু বেগমের স্বামী আবদুর রাজ্জাকও নৌকায় ছিলেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী ছোট নৌকায় যাত্রী বেশি ছিল। ঢেউয়ে নৌকায় পানি উঠে যাচ্ছিল। তারা কয়েকজন পুরুষ যাত্রী পানিতে নেমে নৌকা জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করেন, কিন্তু পারেননি।

এদিকে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক, অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলামও নৌকা ডুবির কারণ হিসেবে একই কথা বলেন। তিনি জানান, ছোট নৌকায় যাত্রী বেশি ছিল, এছাড়া আবহাওয়া খারাপ থাকায় বাতাস ওঠায় নদীতে ঢেউ ছিল। এই অবস্থায় কিছু যাত্রী এক নৌকা থেকে লাফিয়ে আরেক নৌকায় যাওয়ার সময় দোল খেয়ে দুইটি নৌকাই ডুবে যায়।

অন্যদিকে উদ্ধারে একসঙ্গে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও রাজশাহী মহানগর নৌ-পুলিশ। নৌকাডুবির কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়। দুই কর্ম দিবসের মধ্যে কমিটিকে দুর্ঘটনার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক হামিদুল হক জানান, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এখন নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে মরদেহ দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া যারা আহত হয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করা হচ্ছে।