
এস এম জামান, এটিভি সংবাদ
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাজের অধিকাংশ সূচক নিম্নগামী হওয়ার বিষয়টি হতাশাজনক। কয়েক দফায় প্রতিষ্ঠানটির জনবল বাড়লেও কাজের গতি কেনো বাড়ছে না, এ প্রশ্ন অযৌক্তিক নয় মোটেই। তথ্য-উপাত্ত বলছে, গত তিন বছরে উল্লেখ করার মতো কোনো সাফল্য নেই সংস্থাটির। উল্টো দুর্নীতির অভিযোগ থাকা দেড় হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে অনুসন্ধান শেষে দায়মুক্তি বা ‘ক্লিনচিট’ দেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, সরকারদলীয় সংসদ-সদস্য, মেয়র, সচিব, পুলিশ, ব্যাংক কর্মকর্তা, ওয়াসা, রাজউক, গণপূর্ত, বাপেক্স ও তিতাসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণেই দায়মুক্তি পেয়েছেন তারা। আশ্চর্যজনক হলো, দায়মুক্তিপ্রাপ্ত অনেকের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে তথ্য-উপাত্তসহ প্রতিবেদন প্রচার ও প্রকাশিত হয়েছে। তারপরও অনুসন্ধানে দুদক কোনো সত্যতা খুঁজে পেল না কেন, এটাই প্রশ্ন। অবশ্য উল্লিখিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তা জানতে ইতোমধ্যে নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট, যা ইতিবাচক। এতে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজনৈতিক প্রভাব ও তদবির বাণিজ্যের বাইরে রাখা গেলে দুদককে শক্তিশালী ও কার্যকর করা সম্ভব। বস্তুত দুর্নীতিবাজদের রক্ষার ‘বিশেষ’ কোনো চেষ্টা বা কৌশল দুদকের ভেতরেই রয়েছে কি না, তা পরিষ্কার হওয়া জরুরি। বিশেষ করে অভিযোগ পাওয়ার পরও ক্ষেত্রবিশেষে তা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দুদকের ভেতর রয়েছে কি না, এ বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে দুদকের একমাত্র কাজ হচ্ছে দুর্নীতি দমন। এক্ষেত্রে অপরাধীদের মধ্যে কে কোন দলের অনুসারী বা কতটা প্রভাবশালী, তা বিবেচনায় নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অথচ দুদকের কাজকর্মে তা প্রকোটভাবে প্রকাশ পাচ্ছে, যা মেনে নেওয়া যায় না।
জনগণের বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা অটুট রাখতে হলে দুদককে অবশ্যই তার কার্যকারিতার প্রমাণ রাখতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার পদক্ষেপ নিতে হবে সর্বাগ্রে। তা না হলে দুদক একটি সাইনবোর্ডসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। দেশে যে হারে দুর্নীতির বিস্তার ঘটছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। দেশের প্রকৃত উন্নয়নের স্বার্থে দুর্নীতির মূলোৎপাটন জরুরি। এজন্য শক্ত হাতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ও সদিচ্ছা দুদকের থাকা প্রয়োজন।
