
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
এবারের বন্যায় টাঙ্গাইলে ১১টি উপজেলার ৩২৮টি রাস্তা ও ৭৩টি সেতু, কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় পৌনে ৩০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ও সেতুগুলোর কারণে অনেক এলাকায় মানুষের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তা ও সেতুগুলো পুনর্র্নিমাণের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী জনগণ।
টাঙ্গাইল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অফিস সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলায় ৩৮টি রাস্তার ১৫৩ কিলোমিটার ভেঙে ১৮ কোটি ৩ লাখ টাকা ও তিনটি সেতু, কালভার্টের ৩৭০ মিটার ভেঙে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাসাইলে ৪০টি রাস্তার ১৫৯ কিলোমিটার ভেঙে ২৯ কোটি ১০ লাখ টাকা ও সাতটি সেতু, কালভার্টের ৫৬ মিটার ভেঙে ৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সখিপুরে আটটি রাস্তার ৮০ কিলোমিটার ভেঙে ১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা ও ১০টি সেতু, কালভার্টের ৩৫ মিটার ভেঙে এক কোটি ৭৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মির্জাপুরে ২৫টি রাস্তার ১২৪ কিলোমিটার ভেঙে ৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ও ১১টি সেতু, কালভার্টের ১৮৫ মিটার ভেঙে ১৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। দেলদুয়ারে ৭১টি রাস্তার ২৪১ কিলোমিটার ভেঙে ৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ও ১৩টি সেতু, কালভার্টের ৩০২ মিটার ভেঙে এক কোটি ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ভূঞাপুরে ২৫টি রাস্তার ৫৬ কিলোমিটার ভেঙে ১৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ও দুইটি সেতু, কালভার্টের ২৩ মিটার ভেঙে এক কোটি ১৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। নাগরপুরে ৩৫টি রাস্তার ১৫৯ কিলোমিটার ভেঙে ৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ও পাঁচটিসেতু, কালভার্টের ৬৭ মিটার ভেঙে ৬ কোটি ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। কালিহাতীতে ১৯টি রাস্তার ১১৫ কিলোমিটার ভেঙে ৩৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ও পাঁচটি সেতু, কালভার্টের ১২৫ মিটার ভেঙে ৯ কোটি ৯১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঘাটাইলে ৩৪টি রাস্তার ১৫০ কিলোমিটার ভেঙে ২৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা ও পাঁচটি সেতু, কালভার্টের ১২৩০ মিটার ভেঙে ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ধনবাড়ীতে ২২টি রাস্তার ৮২ কিলোমিটার ভেঙে ৩২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ও সাতটি সেতু, কালভার্টের ৮৬ মিটার ভেঙে ৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। গোপালপুরে ১০টি রাস্তার ৩৯ কিলোমিটার ভেঙে ৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা ও পাঁচটি সেতু, কালভার্টের ২৫৩ মিটার ভেঙে ১০ কোটি ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে চলতি বন্যায় মধুপুর উপজেলায় কোনো রাস্তা ও সেতু, কালভার্টের কোনো ক্ষতি হয়নি।
সদর উপজেলার মগড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজহার মিয়া বলেন, গত ২৭ জুলাই বড়বাসালিয়া প্রামের লৌহজং নদের উপরে সেতুর সংযোগ অংশ ধসে যায়। এতে সদর উপজেলার গালা, কুইজবাড়ি, হটিবাড়ীর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী কালিহাতী উপজেলার বাঁশি ও এলেঙ্গা সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। দুই পাড়ের মানুষের যোগাযোগ করতে কয়েক কিলোমিটার বেশি ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ফলে গন্তব্যে পৌঁছাতেও কয়েকগুণ বেশি সময় লাগছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুর সংযোগ অংশ পুনরায় নির্মাণ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ঘারিন্দা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সৈয়দ কবিরুজ্জামান জানান, গত ২৯ জুলাই নওগাঁ গ্রামের বাঁধ ভেঙে যায়। এই বাঁধটি সড়ক হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। এটি ভেঙে যাওয়ায় ওই গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ও বল্লা ইউনিয়নের এবং বাসাইল উপজেলার ফুলকি ও কাশিল ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনর্র্নিমাণের দাবি জানান তিনি।
টাঙ্গাইল এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম আজম জানান, এবারের বন্যা ছিলো দীর্ঘস্থায়ী। এজন্য রাস্তা ও সেতুর ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। এলজিইডির আওতাধীন ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্টের তালিকা করে পুনর্র্নিমাণের জন্য সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। খুব দ্রুতই এগুলো নির্মাণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা হবে।