
মাগুরা প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ
মাগুরার মহম্মদপুরে মধুমতী নদীর বুক কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এসব বালু প্রতিদিন শত শত ট্রলি বোঝাই করে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবার খালি গাড়ি নিয়ে ফিরে যাচ্ছে নদীর চরে। এভাবে চলতে থাকে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত।
মহম্মদপুর উপজেলার দীঘা ইউনিয়নের পাল্টলা-শিরগ্রামের মধুমতী নদীর বুক থেকে এভাবে বালু কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন স্থানীয় ইমরুল নামের এক প্রভাবশালী যুবক।
এলাকার সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে তিনি এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ বাধা দিলে তাকে মারধর, হুমকিসহ নানা রকম বিপদের শিকার হতে হয়।
অবৈধভাবে এ বালু তোলার কারণে নদীভাঙনের আশঙ্কাসহ কাঁচা-পাকা সড়ক নষ্টসহ নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এলাকার মানুষ। ইমরুল উপজেলার বিল-ঝলমল গ্রামের আফজাল মোল্যার ছেলে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মধুমতী নদীর বুক থেকে একসঙ্গে তিনটি অবৈধ ট্রলিতে বালু কাটছেন শ্রমিকরা। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ট্রলি রেখে পালিয়ে যান তারা। তবে এক ট্রলিচালককে পাওয়া গেলে তিনি জানান, প্রতি গাড়িতে ১০০ বর্গফুট বালু ধরে। গাড়িপ্রতি ২০০ টাকা করে দিতে হয় ইমরুলকে। প্রতি গাড়ির হিসাব রাখেন ইমরুলের ম্যানেজার সোহাগ নামের এক যুবক।
তিনি ডাইরিতে লিখে হিসাব রাখেন। বালু কোথায় যাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি জানান, মানুষের বাড়ি অথবা বিভিন্ন রাস্তা নির্মাণ কাজে এ বালু নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, তার কাজ শুধু মালিকের কথামতো বিক্রিকৃত জায়গায় বালু পৌঁছে দেওয়া। জানা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজনকে ম্যানেজ করে পাল্লা-শিরগ্রাম এলাকার মধুমতী নদীর পাড়েই সমতল জায়গা থেকে প্রতিদিন শত শত গাড়ি বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে এ এলাকাসহ আশপাশের এলাকার শত শত একর জমি আগামী বর্ষা মৌসুমে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এমনকি অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে কাশিপুর এলাকার ভাঙন রোধ করতে ব্যবহৃত কোটি কোটি টাকার ব্লক ও জিওব্যাগ ধ্বংস হতে পারে। নদী পাড়ের বাসিন্দা রতন মোল্যা বলেন, ইমরুলকে বালু কাটতে বাধা দিলে তিনি ডিসি ও এসিল্যান্ডের অফিস থেকে লিখিত অনুমতি এনেছেন বলে জানায়। লিখিত কাগজ দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি।
স্থানীয় ইমদাদুর রহমান বলেন, গত দুই মাস ধরে অবৈধভাবে বালু কেটে ইমরুল বিক্রি করছেন। বাধা দিলে সে তাকে মারধর করেন এবং এলাকা ছাড়তে হুমকি দেন। আছাদুজ্জামান ভিকু জানান, নদী থেকে বালু তোলার কারণে শিরগ্রাম বাজার এলাকার রাস্তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।
ইমরুল ক্ষমতার অপব্যবহার করে বালু উত্তোলন করেই চলেছেন। বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয় সচেতন মহল। বালু ব্যবসায়ী ইমরুলকে মুঠোফোন কল দিলে সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে কোনো কথা না বলে লাইন কেটে দেন।
মহম্মদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হরেকৃষ্ণ অধিকারী বলেন, উপজেলা ভূমি অফিস থেকে কাউকে নদী থেকে বালু কাটতে লিখিত বা মৌখিক কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। যদি কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামানন্দ পাল বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, আগামীতেও এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
