রাজশাহী বিভাগে গ্রামেও ছড়াচ্ছে মহামারি করোনা

এস এম ডাবলু (রাজশাহী), এটিভি সংবাদ 

দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর রাজশাহী বিভাগে করোনার সংক্রমণ শহর বাজারে সক্রিয় থাকলেও এখন গ্রামেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে আক্রান্তদের খুঁজে বের করে চিকিৎসার আওতায় আনা যাচ্ছে না। উপসর্গ নিয়ে ও উপসর্গহীন অনেক করোনা রোগী গ্রামে যত্রতত্র ঘুরেও বেড়াচ্ছে।

স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকরা বলছেন, গ্রামে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের খুঁজে এনে হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা এবার নেই।  যদি না কেউ নিজে থেকে হাসপাতালে আসেন। যখন শারীরিক পরিস্থিতি সংকটাপন্ন হচ্ছে, তখন তারা হাসপাতালে আসছেন। আর এ কারণে রাজশাহী বিভাগে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। ভুক্তভোগী স্বজনরা বলছেন, নিবিড় তদারকির অভাবে বিভাগে করোনার বিস্তার ঘটছে।

এদিকে ২১ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে ২২ এপ্রিল সকাল ১০টা পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় করোনায় আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে।  এর মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড-১৯ ওয়ার্ডে তিনজন ও আইসিইউতে একজন মারা গেছেন। বাকি চারজন বগুড়ার দুই হাসপাতালে।

অন্যদিকে এই সময়ের আগের ২৪ ঘণ্টাতেও রাজশাহী বিভাগে আরও আটজনের মৃত্যু হয়। ফলে গত ৪৮ ঘণ্টায় রাজশাহী বিভাগে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে এ নিয়ে করোনায় রাজশাহী বিভাগে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৬৪ জন। রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর সূত্রে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় আরও ১৮০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) আনোয়ারুল কবীর বলেন, শনাক্তদের মধ্যে যাদের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, তাদের শুধু হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। যাদের করোনা শনাক্ত হলেও উপসর্গ নেই তাদের বাড়িতে বা হোম আইসোলেশানে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিভাগের আক্রান্ত ৯৯ ভাগই হোম আইসোলেশানে আছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, শনাক্ত রোগীদের যারা হোম আইসোলেশানে থাকছেন, তাদের ক্ষেত্রে নিবিড় তদারকি তেমন নেই। শনাক্ত রোগীরা নিজ মহল্লা গ্রামে ঘুরে বেড়ালেও তাদের চলাফেলা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এ কারণে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছে করোনা।

রাজশাহীসহ আশপাশের জেলাতে গত ২৪ ঘণ্টায় যারা শনাক্ত হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই গ্রাম থেকে আসা বলে জানিয়েছেন রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস।

লকডাউন চললেও গ্রামে এর প্রভাব তেমন পড়ে না। গ্রামের হাটবাজারও আগের মতোই চলছে। সেখানে প্রশাসনিক কোনো তদারকির প্রভাব না পড়ায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণেরও ঘাটতি রয়েছে।  ফলে গ্রামে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনদের এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের সহকারী পরিচালক আনোয়ারুল কবীর আরও জানান, এবার করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর পরই রোগীর অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ফলে সময় না দিয়ে দ্রুতই মারা যাচ্ছেন তাদের অনেকেই।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। কাজ না থাকলে ঘরের বাইরে যাওয়ারও দরকার নেই বলে তিনি মনে করেন।