
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ
সব বাঁধা উপেক্ষা করেই ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে। গত তিনদিন ধরে বিআইডব্লিওটিসির দেয়া দিনের বেলায় ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা থাকার পরও ভিড় থামছে না।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ জিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট অতিক্রম করে সকাল থেকে শিমুলিয়ার ঘাটমুখী যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে মানুষের ঢলও বাড়ছে।
শিমুলিয়া ঘাটের বিআইডব্লিওটিসির মেরিন অফিসার আহম্মেদ আলী বলেন, ভোর রাত থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। তবে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে সকাল ১০টার দিকে ৮টি অ্যাম্বুলেন্স ও প্রায় তিন হাজার যাত্রী নিয়ে ফেরি যমুনা মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে।
তবে গত রোববার (৯ মে) সন্ধ্যা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ১৫টি ফেরি চলাচল করছে। রাত ৩টা পর্যন্ত ছিল ঘাটে ছিল জনস্রোত। তবে দিনের বেলায় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিসির এজিএম মো. সফিকুল ইসলাম।
এদিকে, ফেরি বন্ধ থাকায় পদ্মা পাড়ি দিতে নানাভাবেই চেষ্টা করছে যাত্রীরা। ট্রলার ও জেলে নৌকায় পদ্মা পার হওয়ার সময় সোমবার ৬টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা আটক করেছে নৌপুলিশ।
মাওয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল কবির জানান, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটের আশপাশ থেকে পদ্মা পার হয়ে মাদারীপুরের বাংলাবাজার, কাঁঠালবাড়ি ও শরীয়তপুরের মাঝিকান্দি যাওয়ার চেষ্টা চলছিল। ট্রলারে নারী ও শিশু কিশোরই বেশি। যাত্রীদের ঘাটে পুশব্যাক করে মাঝি ও নৌকা আটক করে রাখা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার জানিয়েছেন, মানুষের ঢল থামানো যাচ্ছে না। তাই সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ঘাটে দিনের বেলায় সব রকম ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
তাছাড়া শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ৮৭টি লঞ্চ এবং ৪শ স্পিডবোট ও দুই শতাধিক ট্রলার চলাচল করত। এই রুটের ফেরি বহরে ১৬টি ফেরি থাকলেও সচল হয়েছে ১৫টি। কিন্তু যাত্রীরা বলছেন, দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হচ্ছে, দুর্ভোগও হচ্ছে। এরপর ঘাটে এসে ফেরি মিলছে না। ফিরে যাওয়ার অর্থ বা যান কোনোটাই নেই তাদের। তবে নিষেধ সত্ত্বেও তবে কেন বের হচ্ছেন, এমন প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারছেন না কেউই।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধে রাজধানী ঢাকার সবকটি বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তারপরও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে যে যেভাবে পারছেন ঘরমুখী হচ্ছেন।
ছোট ছোট বাহনে ঢাকা থেকে দেশের উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিমের বিভিন্ন জেলার মানুষ মহাসড়ক ধরে ছুটে চলেছেন। রাতে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দূরের কিছু বাসও মহাসড়কে চলাচল করছে। সেই বাসেও যাচ্ছেন অনেকে। কিন্তু দক্ষিণের বিভিন্ন জেলার যাত্রীরা বড় ধরনের বিপত্তির মুখে পড়েছেন। তার মূল কারণ হঠাৎ ফেরি চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ।
ফেরি পার হতে অপেক্ষমান মানুষের যাত্রা ঠেকাতে শেষ পর্যন্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ফলে রোববার (৯ মে) সকাল থেকেই শিমুলিয়া, বাংলাবাজার, কাঁঠালবাড়িসহ বিভিন্ন ঘাটে যাত্রীদের অপেক্ষার প্রহর বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে ভোগান্তিও বাড়ে। জরুরি প্রয়োজনে চলাচল করা বিভিন্ন যানবাহনও আটকা পড়ে।
দক্ষিণ অঞ্চলে নৌপথে যাতায়াত করা যাত্রীরা বলছেন, ঈদযাত্রায় যত বিপত্তি যেন শুধুই তাদের। অন্য জেলার মানুষ গাড়িতে অনায়াসে বাড়ি যেতে পারছেন। শুধু তাদের ক্ষেত্রেই ফেরি বন্ধ যাত্রা ঠেকানোর চেষ্টা করছে সরকার। অথচ অন্যদিকে যাত্রা ঠেকাতে সরকারের তেমন কোনো নজরদারি নেই।
