সরকারি কর্মকর্তা স্ত্রীকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগ, থানায় মামলা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ 

মির্জাপুরে কুমুদিনী হাসপাতালে টাঙ্গাইল জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল কর্মকর্তা গৃহবধূ খন্দকার রেদোয়ানা ইসলাম ইলুকে স্বামী মো. দেলোয়ার রহমান মিজান বালিশ চাপা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে বলে ইলুর পরিবার অভিযোগ করেছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ এবং মোটা অঙ্কের যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয় বলে ইলুর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।

ইলুকে খুনের ঘটনায় তার স্বামী ব্যাংক কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার রহমান মিজানকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ২৭ মার্চ নিহত ইলুর ভাই খন্দকার আসাদুল আবিদ বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মো. শাজাহান মিয়া জানিয়েছেন।

মামলার প্রধান আসামি মিজানকে গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযান শুরু হয়েছে। বাবার হাতে মা হত্যার পর ৬ দিনের শিশুকন্যার ঠাঁই হয়েছে কুমুদিনী হাসপাতালের শিশু বিভাগের নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রে।

আজ সোমবার মামলার বাদী ইলুর ভাই খন্দকার আসাদুল আবিদ ও তার বোন খন্দকার রেদওয়ানা কলি বলেন, তাদের গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলার রোমানতলা গ্রামে। বোন জামাই দেলোয়ার রহমান মিজান পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ভাঙ্গারিয়া গ্রামের এলাহী মোল্লার ছেলে।

তাদের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই তার বোনের ওপর অমানবিক নির্যাতন করে আসছিল মিজান ও তার পরিবার। নিজের পরিবার ও সংসারের দিকে চেয়ে আমার বোন সব অন্যায় অত্যাচার সহ্য করে গেছেন। স্বামী মিজান সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা। তিনি টাঙ্গাইল থেকে সম্প্রতি ভোলা জেলায় বদলি হয়ে যান। গত ২২ মার্চ প্রসব ব্যথা নিয়ে খন্দকার রিদোয়ানা ইসলাম ইলু হাসপাতালে ভর্তি হন, ঐ দিনই কন্যা শিশুর জন্ম হয়। তিনদিন আগে ছুটি হলেও শিশুকন্যা অসুস্থ থাকায় কেবিন ভাড়া নিয়ে ইলু থেকে যান।

গত ২৭ মার্চ দুপুরে মিজান কুমুদিনী হাসপাতালে আসে স্ত্রী ও শিশু কন্যাকে দেখতে। তার স্বামীকে ওয়ার্ডে রেখে আমার মামি খোদেজা বেগম শিশু কন্যাকে দুধ খাওয়ানের জন্য তিনতলায় যান। ফিরে এসে দেখেন রুমের দরজায় তালা। ঘটনাটি কর্তব্যরত নার্স ও চিকিৎসকদের জানালে তারা চাবি এনে দরজা খুলে দেখেন বালিশ চাপা দিয়ে ইলুকে হত্যার পর ঘাতক স্বামী মিজান পলাতক। তার বোনকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন। তারা ঘাতক দেলায়ার রহমান মিজানকে দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, ইলুর হত্যা নিয়ে নানা রহস্যও সৃষ্টি হয়েছে। দুই পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কালচারাল কর্মকর্তা খন্দকার রেদোয়ানা ইসলাম ইলু এবং স্বামী মো. দেলোয়ার রহমান মিজানের এটি ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। দু’জনে ভালোবেসে ও নিজেদেরও পছন্দেই বিয়ে করেছিল। ইলুর আগের সংসারের এক পুত্র সন্তান রয়েছে। বিয়ের সময় মিজান মোটা অঙ্কের যৌতুক নিয়েছিল। যৌতুকের টাকা নিয়েও সংসারে ছিল নানা অশান্তি। পথের কাঁটা দূর করতেই ইলুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অপর দিকে ৬ দিনের শিশুকন্যাকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শিশুর মাকে হাসপাতালের কেবিনে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা এবং বাবা খুনের দায়ে পলাতক থাকায় শিশুর ঠাঁই হয়েছে এখন কুমুদিনী হাসপাতালে। শিশুটি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকরা পরম মমতা দিয়ে তাকে লালন পালন ও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি স্বামীর হাতে নিহত ইলুর মামি খোদেজা বেগমও হাসপাতালে থেকে শিশুর দেখাশোনা করছেন।