চট্টগ্রাম প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ
চট্টগ্রাম নগরের সড়ক-উপসড়কে পানি, বাদ নেই অলিগলিও। সবখানে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি। প্রায় অর্ধেক গণপরিবহন সড়কে নামতে পারেনি। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় মানুষকে।
জরুরি প্রয়োজনে কেউ বাইরে বের হলেও বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়। স্বাভাবিক জীবনে অনেকটা স্থবিরতা নেমে আসে। স্থানীয়রা বলছে, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত না হওয়ায় এই দুরবস্থা। বারবার মেয়াদ বাড়িয়েও এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়নি।
গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরের প্রধান সড়কের বহদ্দারহাট মোড় থেকে ষোলশহর পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার, বহদ্দারহাট থেকে চকবাজার সড়কের বাদুড়তলা মোড় হয়ে চকবাজার তেলিপট্টি পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার, ওয়াসার মোড় থেকে আলমাস এলাকাসহ বিভিন্ন সড়ক-উপসড়ক ও অলিগলিতে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি। চকবাজার কাঁচাবাজারের সামনের সড়ক থেকে তেলিপট্টি মোড়ের দূরত্ব কয়েক শ গজ। কিন্তু সড়কে হাঁটুপানির কারণে গণপরিবহন চলছে না। অনেক পথচারী এটুকু দূরত্ব রিকশায় পার হতে ৩০ টাকা করে দিয়েছে।
দুপুরে আবদুর রহমান নামের এক যুবক বলেন, ‘বহদ্দারহাট থেকে চকবাজার কাপাসগোলা আসতে প্রায় এক ঘণ্টা লেগেছে। বহদ্দারহাট এলাকায় সড়কে পানি। গাড়ি কম। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রিকশায় করে ৭০ টাকা ভাড়া দিয়ে এখানে এসেছি।’
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরের অক্সিজেন এলাকায় মুরাদ নামে সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক চালক বলেন, ‘আমি কোতোয়ালি মোড় থেকে ভাড়া নিয়ে ফতেয়াবাদ এলাকায় যেতে আড়াই ঘণ্টা সময় লেগেছে।
ইউনূস নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আগ্রাবাদ থেকে বহদ্দারহাট এলাকায় প্রতিদিনই যাতায়াত করি। বৃষ্টি হলেই প্রধান সড়কে প্রায় সময় পানি উঠছে। জলবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পগুলো থেকে আমরা সুফল পেতে আর কত দিন লাগবে তা জানি না।’
নগরের কেবি আমান আলী সড়কের ফুলতলা থেকে রাহাত্তারপুল এলাকা পর্যন্ত পানিতে একাকার। দিনভর ওই সড়ক দিয়ে যেতে মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। আশপাশের খাল, নালা-নর্দমার পানি সড়কে উঠে গেছে।
সড়কে যানবাহন কম থাকার বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব বেলায়েত হোসেন বেলাল গতকাল দুপুর আড়াইটার দিক বলেন, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, ষোলশহর, হালিশহর, কাপাসগোলা, চকবাজারসহ অনেক এলাকায় সড়কে পানি থাকায় গণপরিবহন চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। পানির কারণে চলাচল করতে পারেনি ৪০ শতাংশ বাস-মিনিবাস। শুধু যাত্রীসাধারণ নয়, শ্রমিক-কর্মচারীরাও দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রধান আবহাওয়া কার্যালয় চট্টগ্রামের পতেঙ্গার পূর্বাভাস সহকারী শ্রীকান্ত কুমার বসাক গতকাল বিকেলে বলেন, ‘আজকে (গতকাল) বিকেল ৩টার ২৪ ঘণ্টা পূর্ববর্তী সময়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ৬৪ মিলিমিটার এবং নগরের আমবাগান কার্যালয়ে ৭৭ মিলিমিটার বৃষিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত আগামী ১০ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।’
বারবার সময় বাড়িয়েও প্রকল্প শেষ হয়নি
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রধান তিন প্রকল্পে নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আরও কয়েক দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) অধীনে এই তিন প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্পে বর্তমানে কাজের গড় অগ্রগতি ৬৩.৭৫ শতাংশ।
চসিক ও সিডিএ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সুফল পুরোপুরি আসবে না। এসব প্রকল্প কাজের সময় আরো বাড়তে পারে। তবে কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে তা প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।
চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী গতকাল বলেন, ‘নগর ডুবছে খাল, নালা-নর্দমায় পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে। ময়লা-আবর্জনাসহ ভরাট হওয়া মাটি উত্তোলন করা না হলে এবং খালের গভীরতা না বাড়ালে জলাবদ্ধতা কমবে না। জলাবদ্ধতা নিরসনে মূল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। কিন্তু তারা চসিকের সঙ্গে প্রকল্পের কাজ নিয়ে সমন্বয় করছে না। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হলে জলাবদ্ধতার কারণে নগরবাসীকে বারবার দুর্ভোগ-ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বড় প্রকল্পগুলো কখন বাস্তবায়িত হবে তা আমি নিজেও বলতে পারছি না।’
চসিকের অধীনে নগরের বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত ২.৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নতুন খাল খনন প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। তবে গতকাল পর্যন্ত ওই প্রকল্পে এখনো খাল খনন কাজ শুরুই হয়নি। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পে খালের দুই পাশে রিটার্নিং ওয়াল, বক্স কালভার্টসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কাজ শেষ হয়েছে ৫০ শতাংশ। চলতি বর্ষার পর খালের খননকাজ শুরু করা হবে। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত থাকলেও সময় আরো ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।
এটিভি/এস