আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এটিভি সংবাদ :
গাজায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর অভিযানের জন্য ইসরাইলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকেও দায়ী করেছেন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইল ভূখণ্ডে হামলার মাধ্যমে হামাস ইসরাইলকে গাজায় আগ্রাসন চালানোর সুযোগ করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
শুক্রবার (১৭ মে) মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটর এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে।
বাহরাইনের রাজধানী মানামায় আরব দেশগুলোর জোট আরব লিগের ৩৩তম সম্মেলনে মাহমুদ আব্বাস বলেন,
হামাস সম্পূর্ণ একক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে যে হামলা চালিয়েছিল, সেটিই ইসরাইলকে গাজায় এই দীর্ঘ সামরিক অভিযানের অজুহাত তুলে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একাংশ গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানকে সমর্থন করেছে। তাদের কাছে এই অভিযান ন্যায্য এবং এই ন্যায্যতার ভিত্তিও হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলা।
গাজায় চলমান ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞের মধ্যে এই সম্মেলনে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট আরব দেশগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘ফিলিস্তিন সরকার আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের কাছ থেকে যে আর্থিক সহায়তা আশা করেছিল তা পায়নি। আমাদের জনগণের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং সরকারকে তার দায়িত্ব পালনে সক্ষম করার জন্য আরব বিশ্বের সুরক্ষা জালকে সক্রিয় করা এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’
জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা এবং পূর্ব জেরুজালেম-তিন ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে ক্ষমতাসীন রয়েছে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ সরকার। একসময় গাজায় উপত্যকায়ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সরকার ক্ষমতায় ছিল, কিন্তু ২০০৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সেই সরকারকে উচ্ছেদ করে কট্টর ইসলামপন্থি রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস।
ফিলিস্তিনের হামাস ও ফাতাহ গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। ফাতাহ’র বিরোধিতা থেকেই হামাসের জন্ম। ফাতাহ সংলাপ এবং রাজনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার করতে চায়। অন্যদিকে হামাস বিশ্বাস করে, সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ইসরাইল রাষ্ট্রকে নিশ্চিহ্ন করার মাধ্যমেই শুধুমাত্র ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন সম্ভব।
ফিলিস্তিনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হামাসের তেমন গ্রহণযোগ্যতা নেই। কয়েক বছর আগেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা বিশ্বের অধিকাংশ দেশ হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। অন্যদিকে ফাতাহর নেতৃত্বাধীন জোট ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (প্যালেস্টাইনিয়ান অথরিটি-পিএ) আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ফিলিস্তিনের বৈধ শাসক হিসেবে স্বীকৃত।
গত ৭ অক্টোবর সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ইসরাইলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করে হামাস, সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ২৪২ জনকে ধরে নিয়ে যায় তারা। জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরািইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ), যা এখনো চলছে। এরই মধ্যে ইসরাইলি হামলায় গাজা উপত্যকায় ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।