৫১ লাখ টাকা লুটের অভিযোগ: উখিয়ার ওসি মর্জিনাসহ ৪জনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা

কক্সবাজার প্রতিনিধি:
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা নিহতের মাত্র সাত দিন আগে (২৩ জুলাই) তৎকালীন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আকতার বখতিয়ার মেম্বারকে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করে। তার আগে উখিয়া কুতুপালং ইউনিয়নের মেম্বার বখতিয়ারকে গাড়িতে রেখে দুইজনে ৫১ লাখ টাকা লুট করে নেয় বলে অভিযোগ আছে। প্রদীপ সিনহা হত্যার আসামী হিসাবে এখন রিমান্ডে আছে।

অন্যদিকে উখিয়া থানায় বহাল আছে ওসি মর্জিনা আকতার। সেই মর্জিনার বিরুদ্ধে ২৫ আগস্ট নারী নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। সহযোগী হিসাবে আছে তিন পুলিশ।নারী নির্যাতন আইনের ৯(১)তৎসহ দঃবিঃ আইনের ৩২৩/৩২৪/৩৪২/৩৭৯/৫০৬ ধারায় অভিযোগ করা হয় আসামীদের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এ রিয়াদ সোলতানা নুরী (২২) নামে এক কলেজ ছাত্রী মামলাটি করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই উখিয়া নারী নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের পি.পি এড. একরামুল হুদা চৌধুরী।

ওসি মর্জিনা আকতার ছাড়া অন্য আসামীরা হচ্ছে,পুলিশ কনস্টেবল মো. সুমন, এ.এস আই মো. শামীম,পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল ইসলাম মজুমদার।

মামলার এজাহারে বলা হয়, তৎকালীন উখিয়া থানার কনস্টেবল মো. সুমন এর সাথে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল রিয়াদ সোলতানা নুরী নামে ওই তরুণীর। সে সুবাদে বিয়ের কাবিনের কথা বলে গত ৭ জুলাই বেলা দুইটার দিকে খুনিয়াপালং চেকপোস্ট সংলগ্ন তার কক্ষে নিয়ে যায়। কাজি আসার অপেক্ষার অজুহাতে কক্ষে বসিয়ে রাখে। পরে তাকে ধর্ষণ করে।

এরপর চেকপোস্টের পার্শ্ববর্তী একটি দোকানে বসিয়ে রেখে জরুরি কাজের বাহানা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে রাত এগারোটার দিকে বিষয়টি অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে ফোনে জানান ভিকটিম রিয়াদ সোলতানা নুরী।

এ ব্যাপারে কথা বলার অজুহাতে ওসি মর্জিনা তাকে থানায় ডেকে নেয়। কথা বলার এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেন ওসি। এরপর অভিযুক্ত অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় তাকে কক্ষে আটকিয়ে রেখে ব্যাপক মারধর ও নির্যাতন চালানো হয়।

এমনকি পায়ে রশি ও হিজাব দিয়ে চোখ বেঁধে একটি কক্ষে আটক করে রাখে। মামলার আরজির সঙ্গে নির্যাতনের কিছু ছবিও আদালতে দায়ের করা মামলায় যুক্ত করেন রিয়াদ সোলতানা নুরী।

প্রসঙ্গত, ওসি মর্জিনার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। পাশের থানা সাবেক ওসি প্রদীপের যোগসাজসে কথিত বন্দুকযুদ্ধ থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় ইয়াবা ব্যবসায়িসহ বিভিন্ন নিরহ মানুষকে ধরে নিয়ে কোটি কোটি টাকা আদায় অভিযোগ রয়েছে। অনেককে কাছ থেকে টাকা নিয়ে রেহায় দেয়নি। এদের অন্যতম বখতিয়ার মেম্বার। ২৩ জুলাই বখতিয়ার মেম্বারকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে বন্দুক যুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়।যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ইয়াবা পাচারের তালিকায় তার নাম ছিল না।

বখতিয়ার মেম্বারের স্ত্রী শাহিন আকতার অভিযোগ করেন‌‌ ‌‌‌‌‌‌‘একজন আসামি আছে তাকে শনাক্ত করতে হবে’।এ বলে বখতিয়ার মেম্বারকে বাড়ির বাইরে আসতে হবে। কিন্তু দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই হাত কড়া পরিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যায় মেম্বারকে।

একই দিন সন্ধ্যায় পুনরায় ওসি প্রদীপ ও ওসি মর্জিনা নেতৃত্বে ৪০/৫০ জনের পুলিশের একটি দল অভিযান চালায় আবারো বাসায়।

ওসি প্রদীপ ওই সময় বলেন, ‘বখতিয়ার মেম্বার বলেছে আলমারিতে ১৮ লাখ টাকা আছে। ওই টাকা বের করে দাও’। যখন পুলিশের কথামত টাকা বের করা না হয় তখন শাহীন আক্তারকে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে রাখে। পরিবারের সকল মেয়েদের ওপর চলে অমানুষিক অত্যাচার। পরে আলমিরার থেকে ৫১ লাখ লুট করে নেয় প্রদীপ ও মর্জিনা। এমনকি ভাংতি ৫ টাকার কয়েনো নিয়ে যায়।

ওইরাতেই একটি মাদক মামলা দায়ের করা হয় টেকনাফ থানায়। আসামি করা হয় ১৫ জনকে। তারপর অস্ত্র মামলাসহ আরও একটি মামলা হয়। যাতে আসামি করা হয় বখতিয়ারের তিন ছেলেকে। মামলার জব্দ তালিকায় ১০ লাখ টাকা।

বখতিয়ার মেম্বারের স্ত্রী আরো অভিযোগ করেন তার স্বামী ও সন্তানদের বিরুদ্ধে টেকনাফ বা উখিয়া থানায় কোন মামলা বা জিডিও ছিল না। কিন্তু সম্পূর্ণ অর্থের লোভে পড়ে উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আর টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ টাকা জন্য বন্দুক যুদ্ধের নামে তার স্বামীকে খুন করেছে।কথিত বন্দুকযুদ্ধের পরের দিন পরপর তিনটি মামলা করেছে ওসি প্রদীপ। তিনটিতে আসামি করা হয়েছে আমরা তিন ছেলেকে। নগদ ৫১ লাখের বেশি টাকাসহ জমির দলিল নিয়ে গেলেও মামলায় জব্দ দেখানো হয়েছে শুধু ১০ লাখ টাকা। ফেরত দেয়নি দলিলও।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মর্জিনা আক্তারের বক্তব্য হচ্ছে, ওসি প্রদীপকে টাকা নিতে দেখেছেন। তিনি নেননি। ওসি প্রদীপ তাকে থাকতে বলেছেন। সেহিসাবে তিনি পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন মাত্র!