নিউজ ডেস্ক, এটিভি সংবাদ
বিএনপির হাইকমান্ড সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিলেও মাঠপর্যায়ে তা কার্যকর হচ্ছে না। সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থিতা নিয়ে অস্পষ্টতা থাকলেও কাউন্সিলর পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রকাশ্যে গণসংযোগ করছেন। কাউন্সিলর প্রার্থী হিসাবে দলের উপদেষ্টা, বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, এমনকি নেত্রীরাও মাঠে তৎপরতা চালাচ্ছেন।
অধিকাংশ ওয়ার্ডে লড়াইয়ের শীর্ষে রয়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা। মহানগর বিএনপির নেতারা বারবার সতর্ক করলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। শুধু বিএনপি নেতাকর্মী নন, জামায়াতের অনেক প্রার্থীও মাঠে। তবে জামায়াত বিএনপির মতো কঠোর নয়, নমনীয়।
সিটি নির্বাচনে বিরত থাকা নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের নির্দেশ উপেক্ষা করায় মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শনিবার নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মহানগর বিএনপির নেতারা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ঢাকায় সাক্ষাৎ করেছেন। এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তারা ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। নির্বাচনে অংশ না নিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রার্থী হলে দল থেকে চিরতরে বহিষ্কারের কঠোর হুঁশিয়ারি করা হয়েছে। তবে এতেও কাউন্সিলর পদে প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
শনিবার সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন মিডিয়াকে বলেন, দলের কঠোর নির্দেশনা আমরা মৌখিকভাবে বারবার বলেছি, কেন্দ্রকেও জানিয়েছি। এরপরও যারা নির্বাচনে যাচ্ছে, তাদের ব্যাপারে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তালিকা অনুসারে শনিবার চূড়ান্ত নোটিশ পাঠানো হয়েছে। দলের হাইকমান্ডের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের চুল পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না।
দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী তালিকা বড় হচ্ছে। শনিবার পর্যন্ত কাউন্সিলর পদে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা ২৫ জন। এর মধ্যে আটজনই বর্তমান কাউন্সিলর। তারা হলেন-১নং ওয়ার্ডে সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, ৪নং ওয়ার্ডে রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, ৬নং ওয়ার্ডে ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ১৪নং ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৮নং ওয়ার্ডে এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল, ২১নং ওয়ার্ডে আবদুর রকিব তুহিন এবং সংরক্ষিত ৯নং ওয়ার্ডে মহানগর মহিলা দলের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রোকসানা বেগম শাহনাজ।
কাউন্সিলর পদে মহানগর বিএনপির অনেক নেতাও প্রার্থী হয়েছেন। তারা হলেন-১৯নং ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর দিনার খান হাসু, ২২নং ওয়ার্ডে সৈয়দ মিছবাহ উদ্দিন, সাবেক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও জেলা মহিলা দলের সভাপতি সালেহা কবির শেপি এবং ২৬নং ওয়ার্ডে সেলিম আহমদ রনি। এছাড়া ২৯নং ওয়ার্ডের গোলাম মোস্তফা কামাল, ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. আমীর হোসেন, ৪২নং ওয়ার্ডে জেলা যুবদলের সাবেক নেতা সুমন সিকদার, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির যুগ্মসম্পাদক বজলুর রহমান, ৪০নং ওয়ার্ডে ছাত্রদলের সাবেক নেতা আবদুল হাসিব, ৩৯নং ওয়ার্ডে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন, ৩৮নং ওয়ার্ডে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক উসমান হারুন পনির, ৩৭নং ওয়ার্ডে দিলওয়ার হোসেন, ৩৩নং ওয়ার্ডে ছাত্রদল নেতা দিলওয়ার হোসেন, বিএনপি নেতা গৌস উদ্দিন, ৩২নং ওয়ার্ডে যুবদল নেতা কামাল আহমদ, বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা মামুনুর রহমান।
দলীয় কঠোর সিদ্ধান্তের বিপরীতে নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়ানো বিএনপির একাধিক নেতানেত্রীর সঙ্গে মিডিয়া কর্মীদের কথা হয়। মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিএনপির ইলিয়াস বলয়ের অন্যতম শীর্ষ নেতা ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, আমি পাঁচবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর। নির্বাচন থেকে পালানোর কোনো রাস্তা আমার নেই। এখানে দলের নির্দেশ অমান্যের কিছু নেই। দল করতে হলেও জনগণের দরকার আছে। তিনি আরও বলেন, এবার ফলাফল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমার কর্মীদের প্রতিদিন হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। গ্রেফতারও করা হচ্ছে। জনগণের ভালোবাসায় আমি এগিয়ে যাচ্ছি, যাবই। এলাকার লোকজনকে নিয়ে আমি বাঁচব-মরব।
আরেক আলোচিত কাউন্সিলর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, দলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরতে চেয়েছিলাম। যারা একাধিকবার আমাকে নির্বাচিত করেছেন, তাদের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি ছুটি পাইনি। শেষ পর্যন্ত অনেক চিন্তাভাবনা করেই প্রার্থী হয়েছি।
জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিটি কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট রোকশানা বেগম শাহনাজ বলেন, মাঠের অবস্থা ভালো। অনেক কষ্টে মাঠ গুছিয়েছি। এলাকাবাসী আমাকে নির্বাচন করতে বাধ্য করেছে। এতে দলের নির্দেশনা কিছুটা লঙ্ঘন করতেই হচ্ছে। আশা করি, বিষয়টি দলও বুঝবে।
প্রশাসনের কর্মকাণ্ডে সন্দেহ হলে প্রার্থী হবেন না আরিফ : সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রশাসনের অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ডে সন্দেহ গভীর রূপ নিলে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না। শনিবার রোটারেক্ট ক্লাব অব সিলেট সিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা অতি উৎসাহী হয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। ব্যাপক ধড়পাকড় করা হচ্ছে।
অনেক কর্মকর্তাকে বদলিও করা হচ্ছে। এগুলো নির্বাচনকে প্রভাবিত করারই ইঙ্গিত। আরিফের এমন বক্তব্যের পর দলের ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ২০ মে নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশ করে প্রার্থিতার ব্যাপারে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার পূর্বঘোষণা দিয়ে রেখেছেন মেয়র আরিফ। তার আগে প্রশাসনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রার্থী না হতে পারেন-এমন ইঙ্গিত করে তিনি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন।
নৌকার পক্ষে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতার ভোট প্রার্থনা : আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর (নৌকা) পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেছেন জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহীয়া চৌধুরী। তবে তার এমন আচরণে ক্ষুব্ধ জাতীয় পার্টির মেয়রপ্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। ইয়াহীয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাবুল দলের চেয়ারম্যানের কাছে নালিশ করেছেন।
শুক্রবার রাতে ১৮নং ওয়ার্ডে নৌকার সমর্থনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অতিথি হিসাবে ভোট চান সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ইয়াহ্ইয়া। এ ব্যাপারে শনিবার বাবুল বলেন, আমার কর্মসূচিতে ইয়াহ্ইয়া চৌধুরীকে বিভিন্ন সময় আমন্ত্রণ জানালেও তিনি আসেননি। অথচ নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন। দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী এসব কর্মকাণ্ডের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের কাছে পাঠিয়েছি। তারা ইয়াহীয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি আশাবাদী।
বাবুলের মাজার জিয়ারত : শনিবার হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত করে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আবদুল্লাহ সিদ্দিকী, জাতীয় পার্টি সিলেট মহানগর শাখার সদস্য সচিব আব্দুস শহিদ লস্কর বশির, সিলেট জেলা জাতীয় যুব সংহতির আহ্বায়ক মরতুজা আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।