ক্রীড়া নিউজ, এটিভি সংবাদ
আফগানিস্তানের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সম্পর্কটা অন্য রকম। ক্রিকেটের ছোট সংস্করণটা যেন আফগানদেরই। বাংলাদেশের সম্পর্কটা আবার সম্পূর্ণ উল্টো। শুরু থেকেই ২০ ওভারের খেলাটা বাংলাদেশের কাছে দুর্বোধ্য।
কিন্তু এ বছরের শুরু থেকে সে চিত্র ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করে। প্রথমে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, এরপর আয়ারল্যান্ডকে হারানোর পর বাংলাদেশকে হাতছানি দিচ্ছিল আফগানদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়। সেই সুযোগ দুহাতে লুফে নিয়েছে বাংলাদেশ।
বৃষ্টি-বাধায় ১৭ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে আফগানদের দেওয়া ১১৯ রানের লক্ষ্য ৫ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ৬ উইকেটের জয়ে এ বছরের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে নিল সাকিবের দল। সঙ্গে আফগানদের ধবলধোলাইয়ের আনন্দ তো আছেই।
ওভারপ্রতি ৬.৮২ রান—আজ বাংলাদেশের জন্য রান তাড়ার সমীকরণটা ছিল এমন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো উদ্বোধনে নামা আফিফ হোসেন প্রথম বল খেলার আগেই স্কোরবোর্ডে ২২ রান। ২২ রানই লিটনের।
১০ বলে করা এই ২২ রানে চার ছিল ৫টি। ফজলহক ফারুকির প্রথম ওভারেই আসে দুই বাউন্ডারিতে ৯ রান। অভিষিক্ত ওয়াফাদার মোমান্দকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টানা ৩টি চার মেরে স্বাগত জানান লিটন। সেই ওভারে আসে মোট ১৯ রান।
নতুন বলে আফগানদের বিপক্ষে যে ভয়টা ছিল, তা ওই ২ ওভারেই হাওয়ায় উড়ে যায়। রান রেট নাগালে চলে আসায় মুজিব উর রেহমান ও ফারুকির পরের ওভারগুলোতে আর ঝুঁকি নিতে হয়নি লিটন-আফিফদের। ১-২ রানই ছিল তখন সময়ের দাবি। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে বাই থেকে আসা ৪ রান ও আফিফের ছক্কায় ৫০ রানে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ১১৯ রানের ম্যাচে এর চেয়ে ভালো শুরু আর কী হতে পারে!
তবে ইনিংসের দশম ওভারে বাংলাদেশ দুই ওপেনারকেই হারায়। মুজিবকে কাভার দিয়ে উড়িয়ে মারতে যাওয়া লিটনের ইনিংস থামে রশিদ খানের অবিশ্বাস্য ক্যাচে। ২০০ স্ট্রাইক রেটে ইনিংস শুরু করা লিটন যখন আউট হন, তখন তাঁর নামের পাশে ৩৬ বলে ৩৫ রান। ১ বল পর মুজিবের ফুল লেংথের বলে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড আফিফ। তিনি করেছেন ২০ বলে ২৪। তিনে নামা নাজমুল হোসেনের (৪) ইনিংসও দীর্ঘ হয়নি। ওমরজাইয়ের সোজা বলে লাইন মিস করে বোল্ড।
দ্রুত ৩ উইকেট হারানোর পর রান তাড়ায় যে দুশ্চিন্তা যোগ হয়, তা অবশ্য তাওহিদ হৃদয় ও সাকিব আল হাসান চার-ছক্কায় উড়িয়ে দিয়েছেন। দুজনের ২১ বলে ৩১ রানের জুটি বাংলাদেশকে নিয়ে যায় জয়ের দুয়ারে। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ৪ রান, তখন ওয়াফাদারের প্রথম বলেই স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মারেন শামীম। বৃষ্টিতে ভিজেও মাঠে বসে থাকা সিলেটের দর্শক ফেটে পড়েন চিৎকারে। সাকিব শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১১ বলে ১৮ রানে, শামীম ৭ বলে করেছেন ৭ রান।
আগের ম্যাচের মতো আজও আফগান পাওয়ারপ্লেতে দাপট দেখিয়েছে বাংলাদেশ দল। তাসকিনের কথাটা এ ক্ষেত্রে আলাদা করে বলতেই হয়। প্রথম ম্যাচের মতো আজও রহমানউল্লাহ গুরবাজকে আউট করে বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেন তিনি। সেটাও ইনিংসের প্রথম ওভারে। গুরবাজ (৮) পুল শট খেলতে গিয়ে তাসকিনের হাতেই ক্যাচ তোলেন। এটি ছিল টি-টোয়েন্টিতে তাসকিনের ৫০তম উইকেট, মোস্তাফিজুর রহমানের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি পেসার হিসেবে তাঁর এই
ওদিকে আরেক প্রান্ত থেকে একের পর এক ডট বলে চাপ বাড়াতে থাকেন হাসান মাহমুদ। তাঁর প্রথম স্পেলের ২ ওভারে ডট বলই ছিল ৯টি! তাসকিন এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছেন। আরেক আফগান হার্ড হিটার হজরতউল্লাহ জাজাইকে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই কট বিহাইন্ডের ফাঁদে ফেলেন। দুই ওপেনারের দ্রুত বিদায়ের পর যা হওয়ার, ঠিক তা-ই হলো। ২ উইকেট হারিয়ে পাওয়ারপ্লের প্রথম ৬ ওভার শেষে আফগানদের রান ৩৪, এর মধ্যে মোস্তাফিজের করা ষষ্ঠ ওভারেই এসেছে ১৩।
এরপর বৃষ্টির পেটে যায় আফগান ইনিংসের দেড় ঘণ্টা সময়। আবার খেলা শুরু হওয়ার পরও অব্যাহত থাকে বাংলাদেশের বোলারদের দাপট। ইনিংসের নবম ওভারেই মোহাম্মদ নবীকে আউটের সুযোগ সৃষ্টি করেন নাসুম। অধিনায়ক সাকিব কাভারে ক্যাচ ছাড়ায় বেঁচে যান নবী। তবে নবীর ইনিংস দীর্ঘ হতে দেননি মোস্তাফিজ। পরের ওভারেই কট বিহাইন্ড করে দেন তাঁকে। এরপরই জোড়া আঘাত সাকিবের। মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচআউট হন ইব্রাহিম (২২)। একই ওভারে নজিবউল্লাহ জাদরান (৫) কাট শট খেলতে গিয়ে বোল্ড।
৬৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে আফগানদের তখন দিশাহারা অবস্থা। সেখান থেকে আফগান ইনিংসকে টেনে তোলেন করিম জানাত (২৫) ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই (২০)। মোস্তাফিজ ও তাসকিনের বলে আউট হওয়ার আগে দুজন মিলে ২৯ বলে ৪২ রান যোগ করে আফগানদের রান ১০০–এর ওপারে নিয়ে যান। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন, ২টি করে উইকেট সাকিব ও মোস্তাফিজের। তবে কোনো উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়েছেন নাসুম। বলাই যায়, জয়ের মঞ্চটা এই বোলারদেরই গড়া।
এটিভি/এস