আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে এ পৃথিবীর বাসিন্দা বানিয়েছেন।
নিউজ ডেস্ক, এটিভি সংবাদ
দাওয়াত একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ ডাকা, আহ্বান করা। ইসলামে দাওয়াতের সারকথা হচ্ছে, মানুষকে দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির দিকে আহ্বান করা। ইসলামের আবির্ভাব শুধু ব্যক্তির কল্যাণের জন্য নয়; গোটা মানবজাতির কল্যাণের জন্যই ইসলাম। আর ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের সৌভাগ্য দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল—সালাহ ও ইসলাহ।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে এ পৃথিবীর বাসিন্দা বানিয়েছেন।
ইসলাম হচ্ছে সর্বশেষ আসমানি জীবনব্যবস্থা। আর কোরআন সর্বশেষ আসমানি কিতাব।
তাই ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়া একটি উত্তম আমল। কেননা, এই দাওয়াত দানের মাধ্যমে মানুষ সরল পথের দিশা পায়। এর মাধ্যমে মানুষকে তার দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তির পথ দেখানো হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ওই ব্যক্তির চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নেক আমল করে। আর বলে অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা হামিম আস-সাজদাহ, আয়াত : ৩৩)
ইসলামের দিকে আহ্বান করা নবী-রাসুলদের কাজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলে দাও, এটাই আমার পথ, আমি জেনে-বুঝে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকি, আমি এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারা। আর আল্লাহ কতই না পবিত্র এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ১০৮)
সাধারণভাবে সব মুসলমান এবং বিশেষভাবে আলেমসমাজকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল যেন থাকে, যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে; আর তারাই সফলকাম।’ (সুরা আলে-ইমরান, আয়াত : ১০৪)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও মানুষের কাছে পৌঁছে দাও।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪৬১)
দাঈ তথা যিনি ইসলামের দিকে দাওয়াত দেবেন, তিনি বিশেষ গুণে গুণান্বিত হবেন—এটাই স্বাভাবিক। সে গুণগুলো হলো—ইলম, ফিকহ, ধৈর্য, সহনশীলতা, কোমলতা, দয়া, জান-মালের ত্যাগ, নানা পরিবেশ-পরিস্থিতি ও মানুষের আচার-অভ্যাস ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আপনি মানুষকে দাওয়াত দিন—আপনার রবের পথে হিকমত ও উত্তম কথার মাধ্যমে এবং তাদের সঙ্গে তর্ক করুন উত্তম পদ্ধতিতে। নিশ্চয়ই আপনার রব, তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয়েছে, সে সম্বন্ধে তিনি বেশি জানেন এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি ভালোভাবেই জানেন।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ১২৫)
আল্লাহর দিকে দাওয়াতে আছে অফুরন্ত প্রতিদান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেউ হিদায়াতের দিকে আহ্বান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করবে তাদের সওয়াবের কোনো কমতি হবে না। আর কেউ ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান পাপের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করবে তাদেরও পাপের কোনো কমতি হবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৭৪)
বৈষয়িক কোনো কিছুর ভিত তৈরি হয়ে পূর্ণতা পেতে যেমন পরিশ্রম ও ধৈর্যের প্রয়োজন, তেমনি মানুষের অন্তরগুলো গড়ে তুলতে এবং সেগুলোকে সত্যের পথে নিয়ে আসতে ধৈর্য ও ত্যাগের প্রয়োজন। রাসুল (সা.) ইসলামের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন এবং কাফের, ইহুদি ও মুনাফিকদের নির্যাতনের ওপর ধৈর্য ধারণ করেছেন। তারা তাঁর সঙ্গে উপহাস করেছে, মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, কষ্ট দিয়েছে, পাথর ছুড়ে মেরেছে। তারা তাঁকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। এসব কিছুর ওপর তিনি ধৈর্য ধারণ করেছেন। একপর্যায়ে আল্লাহ তাঁকে সাহায্য করেছেন, তাঁর ধর্মকে বিজয়ী করেছেন। তাই দাঈর কর্তব্য হচ্ছে, তাঁর অনুসরণ করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব আপনি ধৈর্য ধারণ করুন, নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা সত্য। আর যারা দৃঢ় বিশ্বাসী নয়, তারা যেন আপনাকে বিচলিত করতে না পারে।’ (সুরা রুম, আয়াত : ৬০)
তাই মুসলমানদের কর্তব্য হচ্ছে মহানবী (সা.)-এর অনুসরণ করা। তাঁর আদর্শে পথ চলা এবং আল্লাহর রাস্তায় কষ্টের মুখোমুখি হলে ধৈর্য ধারণ করা।
এই দ্বিনের অনুসরণ করা ছাড়া এ উম্মত সুখী হতে পারবে না, কল্যাণ অর্জন করতে পারবে না। এ জন্য আল্লাহ তাআলা সব মানুষের কাছে এ ধর্মকে প্রচার করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটা মানুষের জন্য এক বার্তা, আর যাতে এটা দ্বারা তাদের সতর্ক করা হয় এবং তারা জানতে পারে যে তিনিই শুধু এক সত্য ইলাহ আর যাতে বুদ্ধিমানরা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৫২)
মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।
এটিভি/এস