চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ
হিমু চট্টগ্রাম নগরের টেরিবাজার আফিম লেন এলাকায় থাকে। তার বাবা নারায়ণ আইচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। এখন অবসরে। ভাই অনিক আইচ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক পাস করেছেন।
অনিক বলেন, ‘বাবা অসুস্থ হয়ে বাসায় পড়ে আছেন। এখন বাবার জমানো কিছু টাকা থেকে পরিবার চলছে। বোন হিমু অনেক সংগ্রাম করে পড়াশোনা করেছে। বাধা এলেও হার মানেনি সে। তাই তার ফলাফলে সবাই খুশি।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বোর্ডের পক্ষ থেকে পরীক্ষার সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাদের জন্য বোর্ড ও শিক্ষকেরা সব সময় আন্তরিক।
জন্ম থেকেই পৃথিবীর আলো দেখেনি তন্নয় দত্ত। তার বেড়ে ওঠাটাও আর দশজনের মতো নয়। জন্মের এক বছর পর ক্যানসারে মারা যায় বাবা। কঠিন এক পরিস্থিতির মুখে পড়ে তার পরিবার। সংসারে দেখা দেয় অভাব-অনটন। তবে কোনো বাধাই তন্নয়কে দমাতে পারেনি। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা হার মেনেছে ইচ্ছাশক্তির কাছে। এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ–৩ দশমিক ৮৩ পেয়েছে সে। তন্নয়ের মতোই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার কাছে হার মানেনি এস এম সিয়াম ও হিমু আইচ। তারা এবার এসএসসি পাস করেছে।
তন্নয়ের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার গৈড়লা গ্রামে। তারা দুই ভাই, তিন বোন। এক ভাই তন্ময় দত্ত ও বোন তুলি দত্তও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তুলি এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে পড়ছেন। তন্ময় পড়ছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি জানান, বড় বোন ও আত্মীয়স্বজনের আর্থিক সহায়তায় পরিবার ও লেখাপড়া চলছে। বাবা মারা যাওয়ার পর তাঁদের পরিবারে ঝড় নেমে আসে।
তন্নয় এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে চট্টগ্রাম নগরের হামজারবাগে অবস্থিত রহমানিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে। সে মানবিকের ছাত্র। বাড়ি থেকে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করে ক্লাস করত সে। পরীক্ষার সময় এক খালার বাসায় থাকত।
সুরের মধ্যেই এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পায় তন্নয়। সংগীত নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় সে। তন্নয়ের ভাষ্য, আর্থিক দুরবস্থার কারণে ছোটবেলায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গান শেখা হয়নি। কিন্তু গান শুনে শুনে গাওয়ার চেষ্টা করত। এক আত্মীয় হারমোনিয়াম কিনে দিয়েছিলেন। তারপর স্বরলিপি শেখার মাধ্যমে গানের চর্চা শুরু করে সে।
ছেলের ফলে খুশি ফল বিক্রেতা আসাদুল,
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার কাগতিয়া গ্রামের মো. আসাদুল আনোয়ার পেশায় ফল বিক্রেতা। মাসে আয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এ আয়েই সন্তানদের পড়াশোনা ও পরিবারের খরচ সামলান তিনি। তাঁর ছেলে এস এম সিয়াম এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ–৪ দশমিক ২৮ পেয়েছে। তার ফলাফলে খুশি পুরো পরিবার। আসাদুল বললেন, তাঁর ছেলে জন্ম থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে।
ফল পাওয়ার পর এস এম সিয়াম বলে, টানাপোড়েনের মধ্যে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হচ্ছে তার। টাকার অভাবে খাতা-কলমও কিনতে পারত না। বন্ধু, আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার করে পড়াশোনা করতে হতো।
সিয়াম সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে মুরাদপুরের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পিএইচটি সেন্টারে। পরে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয় রহমানিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে। তার বোন সৈয়দা সানজিদাও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। সে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। সিয়াম জানায়, বড় হয়ে শিক্ষক হতে চায় সে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করতে চায়। কারণ, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন।
হার মানেনি হিমু,
প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে প্রতিবন্ধকতা ডিঙানো যায়, তার প্রমাণ দিয়েছে হিমু আইচ। জন্ম থেকে অন্ধ এই পরীক্ষার্থী ৩ দশমিক ৬৭ জিপিএ নিয়ে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করেছে। এইচএসসিতে সে আরও ভালো ফল করতে চায়।
হিমুর আগ্রহও সংগীত। বর্তমানে চট্টগ্রামের শিল্পকলা একাডেমিতে গান শিখছে সে। আধুনিক, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, লোকসংগীত—প্রায় সব ধরনের গানই শুনে শুনে মুখস্থ করে হিমু। সংগীত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কারও জিতেছে।
হিমুর ভাষায়, ‘আমি জন্মগত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে বিদ্যালয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই লেখাপড়া করেছি। শুধু এসএসসি পরীক্ষার সময় শ্রুতলেখকের সহায়তায় পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম। জিপিএ কম পাওয়া নিয়ে আমি চিন্তিত নই। সামনে আরও ভালো করে পড়ব।’
হিমু চট্টগ্রাম নগরের টেরিবাজার আফিম লেন এলাকায় থাকে। তার বাবা নারায়ণ আইচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। এখন অবসরে। ভাই অনিক আইচ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক পাস করেছেন।
অনিক বলেন, ‘বাবা অসুস্থ হয়ে বাসায় পড়ে আছেন। এখন বাবার জমানো কিছু টাকা থেকে পরিবার চলছে। বোন হিমু অনেক সংগ্রাম করে পড়াশোনা করেছে। বাধা এলেও হার মানেনি সে। তাই তার ফলাফলে সবাই খুশি।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বোর্ডের পক্ষ থেকে পরীক্ষার সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাদের জন্য বোর্ড ও শিক্ষকেরা সব সময় আন্তরিক।
এটিভি/এস