atv sangbad

Blog Post

চিকিৎসকের স্ত্রীসহ কুলাউড়ার আস্তানা থেকে গ্রেপ্তার ১০

মৌলভীবাজার প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ
 

চট্টগ্রামের পর এবার মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানার দুর্গম এলাকায় জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দারা। শনিবার (১২ আগস্ট) সেখানে অভিযান চালিয়ে একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের এক চিকিৎসকের স্ত্রীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

শনিবার ভোরে কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নে বাইশালী নামক ওই পাহাড়ি টিলায় সিটিটিসি, সোয়াট, জেলা পুলিশ ও কুলাউড়া থানার পুলিশ অভিযান চালায়। এর আগে শুক্রবার রাত ৮টা থেকে ওই বাড়ি ঘিরে রাখে সিটিটিসি ও স্থানীয় পুলিশ। অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন হিলসাইড’।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সবাই নব্য জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্য। তাদের আস্তানা থেকে প্রায় তিন কেজি বিস্ফোরক, ৫০টির মতো ডেটোনেটর, তিন লাখ ৬১ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণসামগ্রী, কমব্যাট বুট এবং কয়েক বস্তা জিহাদি বই জব্দ করা হয়।অভিযানে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থানার রাফিউল ইসলাম (২২), কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার হাফিজ উল্লাহ (২৫), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার খায়রুল ইসলাম (২২), তাঁর স্ত্রী মেঘনা (১৭), সাতক্ষীরার শরিফুল ইসলাম (৪০), পাবনার আটঘরিয়া থানার আব্দুছ ছত্তারের স্ত্রী শাপলা বেগম (২২), সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সোহেল তানজিমের স্ত্রী মায়েশা ইসলাম (২০), বগুড়ার সারিয়াকান্দি থানার সুমন মিয়ার স্ত্রী সানজিদা খাতুন (১৮), সাতক্ষীরার তালা থানার শফিকুল ইসলামের স্ত্রী আমিনা বেগম (৪০) এবং তাঁর মেয়ে হাবিবা (২০)। এ ছাড়া অভিযানে ছয় শিশুকেও হেফাজতে নেয় সিটিটিসি।

গ্রেপ্তার মায়েশার বড় ভাই ওমর ফারুক জানান, স্বামী সোহেল তানজিমসহ গত ২৬ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিলেন তাঁর বোন মায়েশা ইসলাম।সোহেল ও মায়েশার নিখোঁজ থাকার বিষয়ে গত ৩১ জুলাই সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় জিডি করেছিলেন সোহেলের বাবা হেলালউদ্দীন। তিনি বলেন, সোহেল ও মায়েশা জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

সিটিটিসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ওই জঙ্গি আস্তানায় মায়েশার স্বামী তানজিমও ছিলেন। তবে তিনি পালিয়ে গেছেন।অভিযান শেষে সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, এই জঙ্গিরা বাংলাদেশে নতুন উগ্রবাদী ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামক সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, কুলাউড়ার পাহাড়ে ৫০ শতাংশ জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ করে তাঁরা বসবাস করছিলেন। আরো অনেকে এই আস্তানায় ছিল।

সিটিটিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নির্জন এলাকায় জমি কিনে জঙ্গি আস্তানা তৈরি করে সদস্যদের হিজরতের নামে এখানে এনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। তাদের কাছে এখানে কারা আসত এবং তাদের সহযোগীদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’যা বলছে স্থানীয়রা 
এ বিষয়ে কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ জানান, পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের বাইশালীবাড়ি এলাকায় টিলার ওপর সম্প্রতি বাড়ি নির্মাণ করে কিছু লোক বসবাস করছে। বাড়িটি জঙ্গি আস্তানা বলে তিনি জানতেন না।

পূর্ব টাট্টিউলি বাজারের চায়ের দোকানদার শফিক মিয়া জানান, ওই বাড়ির বাসিন্দারা প্রায় দুই মাস আগে এখানে এসে নতুন বাড়ি করেছে। তাঁর দোকানে এসে অল্প বয়সের দুজন পুরুষ মানুষ নিয়মিত চা খেত। তারা বলেছিল তাদের বাড়ি বগুড়ায়, নদীভাঙনে তাদের বাড়ি চলে গেছে, তাই এখানে এসে বসতি করেছে। আরো পরিবার আসবে।

শনিবার সরেজমিনে গিয়ে আমাদের প্রতিনিধি জানতে পারেন, প্রায় দেড় মাস আগে ওই গ্রামের বাসিন্দা ও কাতারপ্রবাসী রাশিদ আলীর মালিকানাধীন ৫০ শতকের টিলা ভূমি কেনে এই সংগঠনের সদস্যরা। তিনটি টিনের ঘর তৈরি করে তারা বসবাস শুরু করে। স্থানীয়দের সন্দেহ হলে নদীগর্ভে নিজেদের বাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়ায় এখানে এসে ভূমি ক্রয় করেছে বলে জানাত। তারা সেখানে সবজি চাষ, সামাজিক বনায়ন করার কথা বলত।

ওই টিলায় গিয়ে দেখা যায়, টিনের তিনটি ঘরে বিপুল পরিমাণ চাল, সয়াবিন তেলসহ খাদ্যদ্রব্য, চিকিৎসাসামগ্রী ও জ্বালানি কাঠ মজুদ করে রাখা। পুলিশ সদস্যরা জব্দকৃত মালপত্র গাড়িতে তুলছেন। এ সময় স্থানীয় একাধিক লোক জানান, মাসখানেক ধরে এখানে অপরিচিত লোকের আনাগোনা বেড়ে যায় এবং তারা দেশের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা বলে জানায়। এ ছাড়া এই বাইশালী টিলায় ৪০টি পরিবার আসার কথা ছিল।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা]

এটিভি/এস

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :