নিজস্ব প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ
কুমিল্লার কোতয়ালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দলের’ জেলা আমিরসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- জেলা আমির মশিউর রহমান ওরফে রাসেল (৩৭), আবু সুফিয়ান (২০), সালা উদ্দিন (৪৩), আলাউদ্দিন (৩১), মো. জুলহাস হোসেন ওরফে জুলাস (২৫)।
এটিইউ জানায়, দীর্ঘদিন নিষ্কৃয় থাকার পরে গত কয়েক মাস ধরে আবারও সক্রিয় হতে শুরু করেছে জঙ্গি সংগঠন আল্লাহর দল। ইতোমধ্যে তারা নতুন আস্তানাও নিয়েছিল। এর পেছনে বড় কোনো পরিকল্পনা আছে কি না সে বিষয়ে জানতে কাজ চলছে। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ৮টি মোবাইল ফোনসহ বিপুল পরিমাণ সাংগঠনিক দলিল জব্দ করেছে এটিইউ।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর বারিধারায় অবস্থিত এটিইউর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার পুলিশ সুপার (অপারেশন অ্যান্ড মিডিয়া) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী থানার দক্ষিণ ঠাকুরপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আল্লাহর দলের দলের জেলা আমিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযান টের পেয়ে কয়েকজন পালিয়ে গেছে। তাদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে।
পুলিশ সুপার সানোয়ার বলেন, মশিউর রহমান ওরফে রাসেল, আবু সুফিয়ান ও আলাউদ্দিন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আল্লাহর দলের কুমিল্লা জেলা আমির। সালাউদ্দিন জেলা প্রতিনিধি এবং জুলহাস হোসেন ওরফে জুলাস সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছিলো। তারা সংগঠন পরিচালনা করতে নিয়মিত চাদাঁ দিত, পাশাপাশি চাঁদা উত্তোলন, পরিকল্পনা ও প্রচারণার দায়িত্ব পালন তারা দীর্ঘদিন ধরে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করাসহ দেশের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নষ্ট, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ ধ্বংস, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতয়ালী থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ছানোয়ার বলেন, দীর্ঘদিন নিষ্কৃয় থাকার পরে গত কয়েক মাস ধরে আবারও সক্রিয় হতে শুরু করে। এরপর তারা কুমিল্লার কোচিং সেন্টারের নাম করে বাসা ভাড়া নিয়েছে। কি কারণে বাসা ভাড়া নিয়েছে, তাদের কোনো পরিকল্পনা ছিলো কি না। আমরা অতীতে দেখেছি বাসা বা আস্তানা নেয়ার অর্থ হলো কাছাকাছি কোথাও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে তারা সক্রিয় হতে শুরু করছে। ফলে আমরা ধারণ করছি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অথবা অন্য কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে তারা সক্রিয় হতে পারে। আমরা তাদের কাছ থেকে পরিকল্পনা জানার চেষ্টা করবো।
এই দলের অর্থায়নের পেছনে কারা রয়েছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আল্লহর দল নামের এই জঙ্গি সংগঠনটি আর্থিকভাবে খুব শক্তিশালী। বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে তাদের আর্থিক লেনদেন বড় অংকের। ঢাকা, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বরত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের পর দেখা গেছে প্রতিটি জেলায় তাদের সদস্য রয়েছে। প্রতিমাসে অন্য সকল সংগঠনের চেয়ে তাদের কালেকশন অনেক বেশি। এই সকল দলের কিছু সদস্য আছে যারা বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য করে। এমন কি সদস্যরা মাসিক চাঁদা দিয়ে থাকে। বিদেশ থেকেও টাকা আসে। অন্য সকল জঙ্গি সংগঠনের দিকে বেশি নজর রাখার সুযোগ কাজে লাগিয়ে সদস্য বাড়িয়েছে আল্লহর দল নামের এই জঙ্গি সংগঠনটি। ফলে মাঠ পর্যায়ে সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি টাকা সংগ্রহের পরিমাণও তারা বাড়িয়েছে।
আমরা তাদের বিষয়ে আরও নজরদারি বাড়াবো। প্রতিটি জেলা ধরে ধরে কারা কারা সক্রিয় না থেকেও চাঁদা দিয়ে যাচ্ছে। কে কত টাকা দিচ্ছে সব ধরা হবে। নিরবে নিভৃতে থেকে জঙ্গি সংগঠনের অর্থায়ন করে পার পাওয়া যায় না সেটিও আমরা প্রমাণ করে দিবো।
কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে, এই সকল অনেক দলের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কাজ করে। কিন্তু এবার যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদেরকে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আমরা জানার চেষ্টা করবো কোনো স্থান থেকে তারা জড়িত কি না বা আর্থিক কোনো সুবিধা নিয়েছে কি না। তবে এখন পর্যন্ত এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। তবে থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।