নিজস্ব প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ
টানা কয়েক সপ্তাহের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বহুকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধবিরতির আওতায় হামাস ও ইসরায়েল উভয় পক্ষের বেশ কিছু জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে উভয় পক্ষে। জিম্মিদের ফেরত পেয়ে ফিলিস্তিনিরা রীতিমতো উত্সব করেছে। আর হামাসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া ১৩ ইসরায়েলি জিম্মির পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বস্তির কথা জানিয়েছেন। মুক্তি পাওয়া এই দলটিকে রেডক্রসের ব্যবস্থাপনায় গাজা থেকে মিশরে নেওয়ার পর এখন ইসরায়েলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
এদিকে আরো ৫০ জনের বেশি বন্দি মুক্তির অপেক্ষায় আছে। শুক্রবার ১৩ ইসরায়েলি বন্দিকে হামাস মুক্তি দেওয়ার পরপরই পশ্চিম তীরের বেইতুনিয়া চেকপয়েন্ট এলাকায় মুক্তি দেওয়া হয় ৩৯ ইসরায়েলে আটক থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিকে। এদের মধ্যে ১৫ জন কিশোরও রয়েছে। এছাড়া কাতারের মধ্যস্থতায় কার্যকর হওয়া চুক্তির আওতায় আরো ১০ থাই নাগরিক ও একজন ফিলিপিনোকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। কাতার চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মোট ৫০ জন ইসরায়েলি জিম্মি ও ১৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি চার দিনের যুদ্ধবিরতির মধ্যে মুক্তি পাওয়ার কথা। শুক্রবার হামাস যেসব জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে তাদের ইসরায়েলে ফিরিয়ে নেওয়ার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মিশরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে দুই, চার, ছয় ও ৯ বছর বয়সের—মোট চারটি শিশুর পাশাপাশি ৮৫ বছর বয়সি এক নারীও আছেন।
ইসরায়েলিদের প্রতিক্রিয়া : ইওনি আশারের স্ত্রী ৩৪ বছর বয়সি ডরন আশার এবং তাদের দুই কন্যা-চার বছরের রাজ এবং দু বছরের আভিভ জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পেয়েছে। আশার এদিন বিবিসিকে বলেন, আমি আমাদের পরিবারকে দুঃসহ মানসিক অবস্থা ও শোকার্ত একটি পরিস্থিতি থেকে বের করে নিয়ে আসতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম। যাদের অপহরণ করা হয়েছে তাদের শেষ ব্যক্তিটি ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা কোনো উদ্যাপন করব না। তবে স্বস্তি ফিরে পেয়েছি।
ফিলিস্তিনে উত্সবের আমেজ : নিজ দেশের জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ৩৯ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। পাথর ছোড়া থেকে শুরু করে হত্যা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের অভিযোগে তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছিল। ২৪ নারী ও ১৫ কিশোরকে বেইতুনিয়া চেকপয়েন্টের কাছে নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার পর বিপুল সংখ্যক মানুষ উল্লাস করে তাদের শুভেচ্ছা জানায়। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ১৬ বছর বয়সে আটক হওয়া মারাহ বাকিরও আছেন। সীমান্তে পুলিশ কর্মকর্তার ওপর ছুরি-হামলার দায়ে তার সাড়ে আট বছরের জেল দেওয়া হয়েছিল। অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বাকির বলেন, বহু মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই চুক্তি হয়েছে, যা তাদের কাছে অস্বস্তিকর। তিনি জানান আটক থাকার সময় বাইরের অবস্থা সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা ছিল না এবং গাজার পরিস্থিতি সম্পর্কেও তার কোনো ধারণা নেই। চুক্তির খবরটি তার কাছে ছিল অবাক করে দেওয়ার মতো বিষয়।
মোহাম্মেদ খাতিব নামের এক ব্যক্তি বলেন, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখা ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ হওয়ার যে প্রত্যাশা তার একটি লক্ষণ এই বন্দি মুক্তি। ইসরায়েলের হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সত্ত্বেও এই মুক্তি তাই আনন্দের। মুক্তি পাওয়া বন্দিদের নিয়ে বাস যখন তাদের ফিলিস্তিন সীমান্তে এসে পৌঁছায় তখন সেখানে উত্সবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। জানালা দিয়ে দেখা যায় কয়েক জন বন্দি নাচছেন। কেউ কেউ ফিলিস্তিনের পতাকা গায়ে জড়িয়ে রেখেছিলেন। স্লোগানে মুখরিত মানুষের মুখে ছিল ‘আল্লাহ মহান’ ধ্বনি। পুরো বিষয়টা ছিল ‘যুদ্ধের বিভীষিকার মধ্যে বিজয়ের একটি মুহূর্ত’।
শান্তির ঘুম: ফিলিস্তিনের গাজায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি চলছে। শর্ত অনুযায়ী, ইসরায়েল ও হামাস পরস্পর জিম্মি ও বন্দি বিনিময় শুরু করেছে। সেই সঙ্গে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সব ধরনের হামলা বন্ধ রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৪৮ দিন পর শুক্রবার রাতে নির্ভয়ে ঘুমাতে পেরেছে গাজাবাসী। সাময়িক যুদ্ধবিরতি স্বস্তি এনেছে। কেননা, সাত সপ্তাহ ধরে প্রতি রাতে গাজার কোথাও না কোথাও হামলা হয়েছে, প্রাণহানি ঘটেছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ছিল ভিন্ন। এ রাতে হামলা, প্রাণহানি, কান্না বন্ধ ছিল। তবে গাজাবাসী মনে করছে, এটা যুদ্ধবিরতি পূর্ণাঙ্গ নয়। সাময়িক বিরতির পর আবার ইসরায়েলি বাহিনী তাদের ওপর হামলে পড়বে এমনটাই মনে করছে গাজার মানুষ।
Copyright © 2023 Atv Sangbad (A Concern of Aparadh Anusondhan Ltd) All rights reserved