atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > স্বাস্থ্য > জেলায় মশা নিধনে তেমন কার্যক্রম নেই

জেলায় মশা নিধনে তেমন কার্যক্রম নেই

নিউজ ডেস্ক, এটিভি সংবাদ

দেশে এ পর্যন্ত পাঁচ ধরনের মশাবাহিত রোগের কথা জানা গেছে। এগুলো হলো ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জাপানিজ এনকেফালাইটিস। আক্রান্তদের বেশির ভাগই ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলাগুলোর। এসব জেলায় মশা নিধনে তেমন কার্যক্রম নেই।

মশা নিধনে সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে, দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে কীটতত্ত্ববিদ নেই। এর মধ্যে ১২টি সিটি করপোরেশন রয়েছে। ফলে মশক নিধনে কার্যকর ব্যবস্থায় যথাযথ পরামর্শ নেওয়া যাচ্ছে না। মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশি।

চলতি বছর দেশে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের ৫২ শতাংশ ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায়। এরপর বেশি আক্রান্ত ম্যালেরিয়ায়। চলতি বছর পাঁচ হাজারের বেশি ম্যালেরিয়ার রোগী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বান্দরবান জেলায় ৮০ শতাংশ।

দেশে নতুন ফাইলেরিয়া রোগী না পাওয়া গেলেও উত্তরাঞ্চলের ১০টি এন্ডেমিক জেলায় প্রায় ২৫ হাজার সন্দেহভাজন হাইড্রোসিলের রোগী আছে।

চিকুনগুনিয়া রোগী গত কয়েক বছরে পাওয়া যায়নি। তবে মশাবাহিত রোগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ জাপানিজ এনকেফালাইটিস রোগী পাওয়া যাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৩৮৮ জন।

১২ সিটিতে কীটতত্ত্ববিদ নেই

মশার প্রজননস্থল, ধরন, প্রজাতি, সংখ্যা, কোন ধরনের কীটনাশকে মশা মারা যায়, কোন ধরনের রোগের জীবাণু বহন করে, তা নিয়ে গবেষণা করেন কীটতত্ত্ববিদরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১২টি সিটি করপোরেশনের একটিতেও কোনো কীটতত্ত্ববিদ নেই। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় পর্যায়ে মাত্র ১৬ জেলায় কীটতত্ত্ববিদ আছেন। তবে তাঁদের বড় অংশ টেকনিশিয়ান থেকে পদোন্নতি পেয়ে কীটতত্ত্ববিদ হয়েছেন।

সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বে-নজির আহমেদ বলেন, সারা দেশে মশক নিধনে যে ঘাটতি রয়েছে, এতে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়। মশক নিধনে বড় কিছু পৌর এলাকায় যে কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেটি মশা মারতে পারে কি না, তা যাচাই হয় না। ছোট পৌরসভায় অনেক সময় ওষুধও থাকে না। থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য লোকের ঘাটতি থাকে।

তিনি বলেন, সারা দেশে সমন্বিত মশক নিধন কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। অন্যথায় মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

ডেঙ্গু : আক্রান্ত ও মৃত্যু সবচেয়ে বেশি

দেশে গত এক দিনে এডিসবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরো ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৯৮৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৭৩৮ জন এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার ২৪৫ জন।

গতকাল শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টার এ তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯৭ হাজার ৮৬০ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে ৪৭ হাজার ৬৭১ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫০ হাজার ১৮৯ জন। ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৪৬৬ জনের। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৫১ জন, ঢাকার বাইরে ১১৫ জন।

দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মশা নিধনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কীটতত্ত্ববিদ মনজুর আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, নীতিনির্ধারকরা অবৈজ্ঞানিক পন্থায় হাঁটছেন। এতে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মারা যাচ্ছে মানুষ।

অবৈজ্ঞানিক কথাবার্তায় নীতিনির্ধারকরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, মশা নিধনের নামে তামাশা চলছে। ব্যাঙ, হরিণ আর হাঁস দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। বিশ্বের আর কোথাও এমনটি দেখা যায় না। ডোবা-নালায় এডিস মশা ব্রিড করে, সেটার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে মনজুর আহমেদ চৌধুরী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে ডেঙ্গু প্রাকৃতিকভাবে বেড়েছে এবং প্রাকৃতিকভাবে কমে যাবে। সিটি করপোরেশন যে কার্যক্রম চালাচ্ছে, তাতে খুব বেশি কাজ হচ্ছে না।

ম্যালেরিয়া : রোগী বেড়েছে ৭৩%, মৃত্যু ৫৭%

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে পাঁচ হাজার মানুষ। মারা গেছে চারজন। এর আগে ২০১৮ সালে ম্যালেরিয়া রোগী ছিল ১০ হাজার ৫২৩ জন। ওই বছর মৃত্যু সাতজনের। ২০২২ সালে রোগী বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ১৯৫ জন। মারা যায় ১১ জন। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে ম্যালেরিয়া রোগী বেড়েছে ৭৩ শতাংশ এবং মৃত্যু বেড়েছে ৫৭ শতাংশ। এর আগে ২০০০ সালে মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয় ৫৪ হাজার ২২৩ জন। মৃত্যু হয়েছিল ৪৭৮ জনের।

স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু ছড়ায়। বাংলাদেশে মোট ৩৬ প্রজাতির অ্যানোফিলিস মশা দেখা যায়। এর মধ্যে সাতটি প্রজাতি বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া রোগ ছড়ায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উপকর্মসূচি ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ একরামুল হক বলেন, দেশের ম্যালেরিয়াপ্রবণ ১৩ জেলার ৭২টি উপজেলার মধ্যে শুধু বান্দরবান জেলায় ৮০ শতাংশ রোগী পাওয়া যায়। এই জেলার মধ্যে লামা, আলীকদম ও থানচি—এ তিন উপজেলায় ম্যালেরিয়া রোগী সবচেয়ে বেশি।

তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূলের পরিকল্পনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ করছে। কিন্তু ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় মশক নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা আরো জোরালো না হলে ম্যালেরিয়া নির্মূল কঠিন হতে পারে।

ফাইলেরিয়া : এখনো পা ফোলা রোগী আছে

চলতি বছরের ১৩ মে লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস নির্মূল করেছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এবং ফাইলেরিয়া নির্মূল, কৃমি নিয়ন্ত্রণ ও কালাজ্বর নির্মূল কর্মসূচির প্রগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ২০১৫ সাল পর্যন্ত ফাইলেরিয়াপ্রবণ এলাকায় ওষুধ খাইয়েছি। এরপর নতুন করে আর কোনো রোগী পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এখনো পা ও অণ্ডকোষ ফোলা রোগী রয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, কিউলেক্স মশার দুটি প্রজাতি এবং ম্যানসোনিয়া মশার একটি প্রজাতির মাধ্যমে ফাইলেরিয়া রোগ ছডায়। দেশের উত্তরাঞ্চলের ১০টি এন্ডেমিক জেলায় প্রায় ২৫ হাজার সন্দেহভাজন হাইড্রোসিলের রোগী আছে বলে জানিয়েছে আইসিডিডিআরবি।

সমীক্ষায় দেখা যায়, তুলনামূলক অণ্ডথলি ফুলে যাওয়া রোগ বেশি ছড়িয়েছে ৩৪ জেলায়। এর মধ্যে ১৯টি জেলা উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে, আর বাকি ১৫টি জেলাকে তুলনামূলক কম প্রাদুর্ভাব এলাকার তালিকায় রাখা হয়েছে। উচ্চঝুঁকির জেলার মধ্যে রয়েছে রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, বরগুনা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জ।

চিকুনগুনিয়া : প্রাদুর্ভাব তেমন নেই

সরকারের দেওয়া সর্বশেষ হিসাবে, ২০১৭ সালে ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকুনগুনিয়াসংক্রান্ত চিকিৎসা নিয়েছে ১৩ হাজার ৮০০ জনের বেশি। পরের বছর থেকে এ রোগের প্রাদুর্ভাব তেমন দেখা যায়নি।

জাপানিজ এনকেফালাইটিস : চার বছরে মৃত্যু ৭৯

চলতি বছরের শুরুতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এক কর্মশালায় বলা হয়, দেশে গত পাঁচ বছরে ১২ হাজার ১৭২ জনের নমুনা পরীক্ষায় এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৩৮৮ জন। আর চার বছরে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৭৯ জনের। সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে রাজশাহী জেলা। মূলত মে থেকে ডিসেম্বর মাসে বেশি সংক্রমণ ঘটে। এ ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শিশুরা।

কর্মশালায় গবেষকরা জানান, গত ১০ বছরের পরিসংখ্যানে রংপুর বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ জাপানিজ এনকেফালাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রাজশাহী বিভাগে শনাক্তের হার ৩০ শতাংশ।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. এম মুশতাক হোসেন বলেন, জাপানিজ এনকেফালাইটিস ভাইরাস সব জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে মশার বংশ বৃদ্ধি হওয়া মশার মাধ্যমে রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এখনই ব্যবস্থা না নিতে পারলে ডেঙ্গুর মতো মহামারি আকার ধারণ করতে পারে।

এটিভি/এস

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :