সরেজমিনে গেলে ‘আমার ছবি তোলেন, বেশি করে ছবি তোলেন’ এমন দম্ভ করেই সময় টিভির ক্যামরার সামনে কথা বলেন ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের এক নারী দালাল। আর অকপটেই স্বীকার করেন হাসপাতালের রোগী ভাগিয়ে টাকার বিনিময়ে তিনি ক্লিনিকে নিয়ে যান।’
এ নারীর মত অসংখ্য দালাল রয়েছে, যারা প্রতিদিন হাসপাতালে আসা অসহায় রোগীদের স্থানীয় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে এক প্রকার জোরজবরদস্তি করেই নিয়ে যান। কেবল দালালচক্রের দৌরাত্ম্যই নয়, হাসপাতালটিতে হয় না বেশিরভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের ডাক্তাররা এসব প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোর চিকিৎসা বাণিজ্যে থাকায় সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা হয় না আর বন্ধও হয় না দালালচক্রের দৌরাত্ম্য। হাসপাতালটির প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বলতে যেন কিছুই নেই এখানে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মনি বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘এখানে প্রায়ই আল্ট্রাসোনোগ্রাম বন্ধ থাকে। নানা অজুহাতে বেশির ভাগ পরীক্ষাই হয় না। ফলে আমরা বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে বাড়তি দামে সব পরীক্ষা করতে বাধ্য হই। জেলা সদরের হাসপাতালের সেবার এমন অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।’
মো. বাতেন সিকদার নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, হাসপাতালে টিকেট কেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ডাক্তারের দেখা পাওয়া যায় না। আর দেখা পেলেও নাম সর্বস্ব চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে ওই একই ডাক্তারকে বাইরে চেম্বারে দেখালে ভাল চিকিৎসা মেলে।
যদিও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. টিএ মেহেদী হাসান সানির দাবি, অনেক সংকটের মধ্যে সাধ্যমত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে সমস্যার কথা স্বীকার করে তত্ত্বাবধায়ক জানালেন দালালচক্রের পাশাপাশি চিকিৎসকদের অনিয়মের ব্যাপারে সতর্ক করা হচ্ছে।
কেবল দালালচক্রই নয়, হাসপাতালের কতিপয় চিকিৎসকও বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবসায় জড়িত বলে স্বীকার করে হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক শামীম আহমেদ বলেন, ‘সব অনিয়ম বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
১৯৮৩ সালে যাত্রা করা ঝালকাঠি সদর হাসপাতালটিতে সেবিকা পদের কোনো জনবল সংকট নেই। তবে ৪০ জন চিকিৎসক পদে ২৭ জন এবং দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ১৬০ কর্মচারীর মধ্যে ৮২টি পদই শূন্য রয়েছে।