দেশে গত এক দিনে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৯৬০ জন। এ নিয়ে চলতি বছরে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল এক লাখ ১২ হাজার ১৮৪। এ পর্যন্ত মারা গেছে ৫৩৭ জন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীর মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা ও গর্ভের শিশুর ঝুঁকি বেশি। কারণ একজন নারী অন্তঃসত্ত্বা হলে তাঁর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা মুশতাক আহমেদ বলেন, গর্ভাবস্থায় ও ঋতুস্রাবকালে কোনো নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে নারীরা তাদের যত্ন নেয়।
অন্তঃসত্ত্বা মা ও শিশু উভয়ই ঝুঁকিতে
২৫০ শয্যা টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, ডেঙ্গুর ভাইরাস মা থেকে গর্ভের সন্তানের শরীরে যেতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক ও গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে রক্তের অনুচক্রিকা কমে যায়। আবার গর্ভাবস্থার শেষের দিকে প্রসূতি নারীর রক্তের অনুচক্রিকা কমে যায়। বিশেষ করে শেষ তিন মাসে এমনটা ঘটে বেশি।
তিনি বলেন, গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে শরীরে পানি কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে রক্তচাপ কমে আসে। মায়ের পাশাপাশি গর্ভের সন্তানের শরীরে রক্ত চলাচল ও পুষ্টি কমে যেতে পারে। ফলে গর্ভেই শিশুর মৃত্যু হতে পারে। অথবা অসময়ে সন্তান প্রসব হতে পারে। কিংবা সন্তানের ওজন কম হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘যদি কোনো নারী গর্ভকালীন প্রথম বা দ্বিতীয় তিন মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তবে সেটিও কিন্তু বিপজ্জনক। এ সময় জ্বরের কারণে মায়ের গর্ভপাত হয়ে থাকে। রক্ত বন্ধ হওয়ার যে প্রক্রিয়া, সেটা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কারো কারো দাঁতের গোড়া দিয়ে, চোখ দিয়ে, নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। গর্ভবতী মায়ের এ ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে মা ও সন্তান দুজনেরই মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।’
পুরুষ বেশি আক্রান্ত, মৃত্যু বেশি নারীর
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মধ্যে ৬২.২৭ শতাংশ পুরুষ, ৩৭.৭৩ শতাংশ নারী। মারা যাওয়া ৫৭.৭২ শতাংশ নারী, ৪২.২৮ শতাংশ পুরুষ।
গতকাল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ৯ জনের মধ্যে পাঁচজন নারী। এর মধ্যে ১৬ থেকে ২০ বছরের একজন, ২৬ থেকে ৩০ বছরের একজন, ৩১ থেকে ৩৫ বছরের একজন, ৪১ থেকে ৪৫ বছরের দুজন।
এর আগের দিন মারা যাওয়া ১৪ জনের মধ্যে ১০ জনই ছিল নারী। এর মধ্যে ছয় থেকে ১০ বছরের একজন, ২১ থেকে ২৫ বছরের একজন, ২৬ থেকে ৩০ বছরের একজন, ৩১ থেকে ৩৫ বছরের দুজন, ৪১ থেকে ৪৫ বছরের তিনজন, ৪৬ থেকে ৫০ বছরের দুজন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছর মারা যাওয়া রোগীর মধ্যে ৩১০ জন ছিল নারী। এর মধ্যে ১৭০ জনের বয়স ১৬ থেকে ৪৫ বছর, যা মোট নারীমৃত্যুর ৫৪.৮৩ শতাংশ। মারা যাওয়া এসব নারীর মধ্যে ১৬ থেকে ২০ বছরের ১৮ জন, ২১ থেকে ২৫ বছরের ৩২ জন, ২৬ থেকে ৩০ বছরের ২৪ জন, ৩১ থেকে ৩৫ বছরের ৪০ জন, ৩৬ থেকে ৪০ বছরের ৩৩ জন, ৪১ থেকে ৪৫ বছরের ২৩ জন মারা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, নতুন ও পুরনো মিলিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রচুর রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৩ হাজার ৬৬৫ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪৪ হাজার ২২৬ জন ভর্তি আছে। চলতি আগস্টে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬০ হাজার ৩৫২ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৮৬ জনের।