চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ
তিন বছর আগে চুয়াডাঙ্গা দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হলেও নানা জটিলতায় এই ভবন বুঝে নিয়ে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শুরু হয়নি এখনও। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কাস্টমসের জরাজীর্ণ পুরোনো একটি ছোট ভবনেই তাদের কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। এতে করে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে দুই দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের। নবনির্মিত ভবনটি বুঝে না নেওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ ভবনটি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
৩৭ বছর আগে ১৯৮৭ সালে দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ এবং অল্প সময় স্বল্প খরচে আসা যাওয়া করা যায় গুরুত্বপূর্ণ এই চেকপোস্ট দিয়ে। চিকিৎসা, ভ্রমণ, ব্যবসাসহ নানা কাজে প্রতিদিন উভয় দেশের অন্তত ৯০০ থেকে ১০০০ যাত্রী আসা যাওয়া করেন।
দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই কাস্টমস ভবনের ভেতরে অল্প জায়গায় এ গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করে আসছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের মালামাল যেখানে চেক করেন, সেখানেই যাত্রীদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা হয়। দুই দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের দুর্ভোগ ও নানা সমস্যা নিরসনের জন্য ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল তিন কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনতলা বিশিষ্ট দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ভবনের কাজ শুরু হয় এবং নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। ৩ বছর আগে ভবন নির্মাণ শেষ হলেও নানা জটিলতায় এখনও কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা ও অযত্নে পড়ে থাকায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে নবনির্মিত ভবনটি। ইতোমধ্যে ভবনের দেয়াল ও পিলারে ফাটল ধরেছে ও দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়তে দেখা গেছে।
দুই দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের অভিযোগ, রোদ-বৃষ্টি ও শীতের সময় বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। বসার কোনো জায়গা নেই, টয়লেট সুবিধা নেই। একই জায়গায় ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এর কাজ সম্পন্ন হয়। তাই অনেকে বিভ্রান্তিতে পড়ে তাদের বুঝতে কষ্ট হয় কোনটা ইমিগ্রেশন আর কোনটা কাস্টমস।
নতুন ইমিগ্রেশন ভবনে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা থাকলেও উভয় দেশের যাত্রীরা এসব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যাত্রীদের দীর্ঘ সময় খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার জন্য।
চুয়াডাঙ্গা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মহসীন জানান, প্রায় তিন বছর আগে নির্মাণকাজ শেষ হবার পরই ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে ভবনটি বুঝে নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি। কিন্তু ভবনটি পূর্ণাঙ্গভাবে বুঝে নিতে হস্তান্তরের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে আমাদের ফেরত দেয়নি। তবে ভবনটির ৩য় তলায় যে ব্যারাক আছে সেটি ইমিগ্রেশন পুলিশ ব্যবহার করছে। ভবনে ছোটখাটো কোনো সমস্যা থাকলে বিষয়টি আমাদের জানালে সমাধান করার ব্যবস্থা করা হবে। আশা করছি খুব দ্রুত ভবনটি বুঝে নিয়ে কাজ শুরু করবেন।
চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ জানান, ভবনটি নির্মাণের পর আমরা তা পরিদর্শন করেছি। ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলেও ভবনে বেশ কিছু ত্রুটি থাকায় তা ব্যবহার উপযোগী না হওয়ায় কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। ত্রুটিগুলো উল্লেখ করে অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য চুয়াডাঙ্গা গণপূর্ত বিভাগকে আমরা কয়েকবার চিঠি প্রদান করেছি। উনারা চিঠির কোনো জবাব দিচ্ছেন না। সাম্প্রতিক আমরা মৌখিকভাবেও যোগাযোগ করছি, আমরা দ্রুত ভবনটি বুঝে নিতে চাই। ভবনটি বুঝে নিয়ে ইমিগ্রেশন কাজ শুরু হলে যাত্রীদের দুর্ভোগ ও নানা সমস্যা নিরসন হবে।
Copyright © 2023 Atv Sangbad (A Concern of Aparadh Anusondhan Ltd) All rights reserved