দিনাজপুর প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ
বাংলাদেশে প্রথমবারের মত কৃত্রিম উপায়ে উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটালো দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স এন্ড এনিমেল ব্রিডিং বিভাগের গবেষকরা। তারা জানান, আগে বিদেশ থেকে উটপাখির বাচ্চা সংগ্রহ করা হতো, যা ছিলো ব্যয়বহুল। এখন দেশেই এর উৎপাদনে আর্থিক সাশ্রয়ের পাশাপাশি আমিষের ঘাটতি পূরণে সৃষ্টি হবে নতুন মাত্রা।
ইনকিউবেটরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একটি ট্রেতে সাজানো সারি সারি উটপাখির ডিম। সেখানেই একটি ট্রে থেকে উকি দিচ্ছে ছোট্ট এক ছানা। চারপাশের শব্দে চেয়ে দেখছে এদিক-ওদিক।
দিনাজপুরে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের গবেষণাগারে উটপাখির ডিম থেকে এই বাচ্চা ফোটানো হয়েছে। বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ গাফফারের নেতৃত্বে এক গবেষণায় প্রায় দেড় মাস আগে ইনকিউবিটরে বসানো ৬টি ডিমের একটি থেকে বাচ্চা ফুটেছে।
১১ জুলাই দুপুরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস অ্যান্ড এনিমেল ব্রিডিং বিভাগের গবেষণাগারের ইনকিউবেটরে এই ডিম ফোটান গবেষকরা। দেড় মাস আগে ইনকিউবিটরের ট্রেতে ছয়টি ডিম বসানো হয়। সেখান থেকে একটি ডিম ফুটে প্রথমবারের মতো ৯৪৮ গ্রাম ওজনের একটি বাচ্চা জন্ম নেয়।
দেশে প্রোটিনের যোগান দিতে প্রথমবারের মত উটপাখির বংশবিস্তারের সফলতা পাওয়ার কথা জানান জেনেটিকস বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. উম্মে সালমা। তিনি বলেন, হাবিপ্রবিতে আড়াই বছর ধরে উটপাখির বংশবৃদ্ধি, বাণিজ্যিকভাবে উটপাখির চাষ করে দেশে প্রোটিনের জোগান দেওয়ার বিষয়ে গবেষণা শুরু হয়।
২০১৯ সালে প্রথম হাবিপ্রবি খামারে একটি উটপাখি ডিম দেয়। পরে ডিমটি ভেঙে যায়। অবশেষে ইনকিউবিটরে থেকে বাচ্চা ফোটানোর চেষ্টায় সফলতা পেলেন তারা। উটপাখির বাচ্চাটির সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করছেন পিএইচডি গবেষক খন্দকার তৌহিদুল ইসলাম।
বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রাশেদুল ইসলাম মনে করেন, এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে স্বল্প খরচে খামারিদের বাচ্চা সরবরাহ করতে পারলে বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হওয়া যাবে।
হাবিপ্রবিতে ২০১৫ সালের শেষের দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রথম দুটি উটপাখির বাচ্চা আনা হয়। পরে ছোট-বড় মিলে আরো ১৯টি উটপাখি আনা হয়। হাবিপ্রবির ক্যাম্পাসেই ভেটেরিনারি ভবন সংলগ্ন এক বিঘা জমিতে খামার স্থাপন করে গবেষণা শুরু করা হয়।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোলাহল পরিবেশে গবেষণা বাধাগ্রস্ত হওয়া ও শিক্ষার্থীদের গবেষণায় বিঘ্ন ঘটায় ২০২১ সালে সদর উপজেলার গোপালগঞ্জের রানীগঞ্জ এলাকায় খামারি ও ব্যবসায়ী সুলতান ইফতেখার ওয়ালীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি হয়। এরপর উটপাখিগুলো তার খামারে লালনপালন হতে থাকে। ওই খামারে উৎপাদিত ডিম থেকেই বাচ্চা ফোটানো হয়েছে।
উটপাখির বৈজ্ঞানিক নাম ‘স্ট্রথিও ক্যামেলাস’। এর জন্মস্থান আফ্রিকা অঞ্চলে। মরুভূমির উষ্ণ আবহাওয়ায় উটপাখির প্রচণ্ড গরম সহ্য করার ক্ষমতা যেমন আছে, তেমনি বৃষ্টি ও শীতপ্রধান এলাকায়ও উটপাখি সহজেই খাপ খাইয়ে চলতে পারে।
উটপাখির একটি ডিমের ওজন ১-২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। উটপাখির ওজন ৮০-১৫০ কেজি ও উচ্চতা ১.৮-২.৮ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ডিম দেয়ার সময় মার্চ-সেপ্টেম্বর। মৌসুমে একটি উটপাখি ৬০-৮০টি পর্যন্ত ডিম দেয়। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে সময় লাগে ৪০-৪২ দিন।
এটিভি/এস