আহসান হাবীব, এটিভি সংবাদ
লজ্জায় মাথা নত হয়ে যায়, দেশে যুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধা অথচ যুদ্ধ করেও এখন পর্যন্ত তালিকায় নাম আসেনি অনেকের। স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত রাজাকাররা যখন গেজেটভুক্ত হন, তখন অপমানিত হন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা। দেরিতে হলেও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় শুরু করছে অনুসন্ধান।
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার পাড়াটঙ্গীর মৃত মালে ফরাজীর ছেলে আবুল হোসেন ফরাজী। ২০০৫ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হন তিনি। অথচ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভাষ্য, আবুল হোসেন ফরাজী স্বাধীনতাবিরোধী। মুক্তাগাছার রাজাকার তালিকায়ও রয়েছে তাঁর নাম। শুধু তাই নয়, উপজেলার চরলাঙ্গুলিয়া গ্রামের মৃত জৈমত মুন্সীর ছেলে মৃত আবুল সেক এবং সৈয়দপাড়া গ্রামের মৃত হোসেন আলীর ছেলে মো. আ. খালেকও স্বাধীনতাবিরোধী। তাদের নাম উপজেলার রাজাকার তালিকায় রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়েছেন তারা।
২০১৭ সালে উল্লিখিত তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সম্প্রতি তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বাধীন জামুকার সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি ভাতাপ্রাপ্ত আরও ৯ অমুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি জামুকার সভায় বাতিল করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের স্বীকৃতি বাতিলের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র বলছে, আবুল হোসেন ও আবুল সেক ২০০৫ সালে এবং আ. খালেক ২০১৫ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন। জামুকা থেকে তাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সহকারী কমান্ডার মো. চান মিয়া ওই তিনজনের বিষয়ে পৃথক অভিযোগ দায়ের করেন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যয়নসহ দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, তারা স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার। পরে জামুকা থেকে বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে মতামত চেয়ে পাঠানো হয়। ২০১৭ সালে গঠিত কমিটিও উল্লিখিত তিনজনকে রাজাকার উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়। এ ছাড়া ২০২০ সালে অন্য একটি কমিটির প্রতিবেদনেও উল্লিখিত তিনজনকে রাজাকার উল্লেখ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মন্ত্রীর নেতৃত্বে ৯ সদস্যের জামুকার ৮৯তম সভায় বিষয়টি সিদ্ধান্তের জন্য আসে। ওই সভায় তিনজনসহ ১২ জনের গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মুক্তাগাছায় বর্তমানে ৪৬৫ জন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন।
জানতে চাইলে মুক্তাগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল কাশেম বলেন, বাতিলের সিদ্ধান্ত হওয়া তিনজন চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী। নানাভাবে তারা সত্য গোপন করে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। আসলে মুক্তিযুদ্ধের সময় অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা দেশের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেছেন। তাই অনেক ক্ষেত্রে অনেকের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা প্রকাশ্যে আসতে সময় লাগছে।
জানতে চাইলে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ শেষ পর্যায়ে। অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে আমরা অমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত করেছি। শিগগিরই তাদের গেজেট বা সনদ যাঁর যেটা আছে, সেগুলো বাদ দেওয়া হবে।
অমুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার টাকা ফেরতের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ভাতা ফেরত নেওয়ার বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
স্বীকৃতি বাতিল
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার ভবানীপুরের আবদুর রহমান মোল্লার ছেলে আমির হোসেন, চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী গ্রামের মৃত বদিউজ্জামান তালুকদারের ছেলে সেলিম মিয়া তালুকদার, কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার বড়হাটী গ্রামের মৃত আবদুস সামাদের ছেলে আ. হামিদ, নিকলীর ধারীশ্বর গ্রামের মৃত সৈয়দ আতাউর রহমানের ছেলে সৈয়দ কেনু মিয়া, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার চিয়ারী গ্রামের মৃত ওমর আলী সরদারের ছেলে আমির উদ্দীন সরদার, নওগাঁর আত্রাই উপজেলার কাশিয়াবাড়ীর মৃত কাদের উদ্দিন শেখের ছেলে এস এম আবদুর লতিফ, ভবানীপুরের মৃত সমসের আলী প্রামাণিকের ছেলে আবদুল আজিজ, ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার বাবুরচর গ্রামের মৃত নৈমদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে মজিবুর রহমান এবং মেহেরপুর সদরের পুরনদরপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে আমজাদ হোসেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, দেশে এখন সমন্বিত তালিকায় (চূড়ান্ত তালিকা) গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৪ হাজার ৭৩৯ জন।
Copyright © 2023 Atv Sangbad (A Concern of Aparadh Anusondhan Ltd) All rights reserved