সৈকত মনি, এটিভি সংবাদ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে গত ১৪ বছর ধরেই সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রয়েছে, সে কারণেই বাংলাদেশ উন্নতি করতে পারছে।
সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য সফরের সময় বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ওই সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। তারা জানিয়েছে, প্রায় আধঘণ্টার সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ, বিচার বর্হিভূত হত্যা, গণতন্ত্র এবং রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, তারা চায় না এই পরিবারের কেউ ক্ষমতায় আসুক।
বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক ইয়ালদা হাকিম মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির আগে বাংলাদেশে বন্দুকযুদ্ধের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা জারির আগে ২০১৮ সালে ৪৬৬ মানুষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। ২০১৯ সালে ৩৮৮ মানুষ এভাবে নিহত হয় আর ২০২০ সালে নিহত হয় ১৮৮ জন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার পর ওই সংখ্যা ১৫ জনে নেমে এসেছে।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যেসব সংখ্যা তারা উল্লেখ করেছে, সেগুলো তারা প্রমাণ করতে পারেনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব হত্যাকাণ্ড আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করেনি। কারণ আমরা প্রমাণ চেয়েছিলাম, সেগুলো তারা পাঠিয়ে দিক, আমরা তদন্ত করে দেখব।”
জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়েচেভেলের একটি তথ্যচিত্রে সম্প্রতি দাবি করা হয়, র্যাবের দু’জন ব্যক্তি গোপন তথ্য ফাঁস করে বলেছেন যে, এসব হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এসেছে। এ বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছে বিবিসি।
উত্তরে তিনি বলেন, আমি জানি না তারা কীভাবে এটা করেছে, কিন্তু আমেরিকায় কী ঘটছে, আপনি দেখতে পাচ্ছেন। সেখানে প্রায় প্রতিদিন একাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এমনকি স্কুল, শপিং মল, রেস্তোরাঁয় হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এমনকি স্কুল শিক্ষার্থীরা, সাধারণ মানুষ হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অথবা সশস্ত্র ব্যক্তির হাতে নিহত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তাদের নিজেদের ব্যাপারে আরও মনোযোগী হওয়া। তাদের দেশের কী অবস্থা? তাদের উচিত শিশুদের জীবন রক্ষা করা। তারা নিজেদের লোকজনের ব্যাপারে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা যেসব অভিযোগ করেছে, আমরা তাদের কাছে প্রমাণ চেয়েছিলাম, তারা দেয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, তার মানে হচ্ছে এই নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞা একটি ‘খেলার মত’। কেন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল, সেটা এখনও তার কাছে স্পষ্ট নয়।
নিজের পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা তুলে ধরে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই খুনিরা দায়মুক্তি পেয়েছিল। আমি এমনকি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারিনি, আমার বিচার পাওয়ার কোনো অধিকার ছিল না। সেই সময় তারা কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। বরং একজন হত্যাকারী আমেরিকায় আশ্রয় নিয়েছে। আমরা তাদের বারবার অনুরোধ করেছি, তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য। তারা করেনি। কেন তারা শুনছে না, আমি জানি না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত এপ্রিলে সংসদে এক বক্তব্যে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো দেশে ক্ষমতা উল্টাতে পারে, পাল্টাতে পারে। সে প্রসঙ্গেও সাক্ষাৎকারে তাকে প্রশ্ন করে বিবিসি।
জবাবে তিনি বলেন, আমার কাছে একটা বড় প্রশ্ন হল, কেন তারা নিষেধাজ্ঞা জারি করল? যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের সন্ত্রাস মোকাবেলার জন্য কাজ করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তখন তারা লঙ্ঘনকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যারা ভুক্তভোগী, তাদের পক্ষে নয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, জাতিসংঘ, সবাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে- বিবিসির সাংবাদিক এই প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন, “আমি জানি ১২টি প্রতিষ্ঠান মিলে এসব বক্তব্য দিয়েছে, কিন্তু তারা প্রমাণ করতে পারেনি। আমি জানি না কী আন্তর্জাতিক খেলা চলছে।”
বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২০ হাজারের মত মামলা, সাত হাজারের বেশি বিএনপি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারের তথ্যের প্রসঙ্গ ধরে বিবিসির প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, হ্যাঁ, কিন্তু তারা কী করেছিল? তারা মানুষ হত্যা করেছে, তারা ককটেল ছুড়েছে, তারা পাবলিক বাসে আগুন দিয়েছে। ৩৮০০ পাবলিক বাসের ভেতরে যাত্রীদের রেখেই আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তারা সাধারণ মানুষ হত্যা করেছে, ট্রেন, লঞ্চ, প্রাইভেট কারে আগুন দিয়েছে। আপনি হলে কি করতেন? আপনারা কি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতেন না?