atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > প্রচ্ছদ > দেশে ১ কোটি ৮০ লক্ষ নিরক্ষর মানুষ স্বাক্ষরতা জ্ঞান পেয়েছে: প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন

দেশে ১ কোটি ৮০ লক্ষ নিরক্ষর মানুষ স্বাক্ষরতা জ্ঞান পেয়েছে: প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে ১ কোটি ৮০ লক্ষ নিরক্ষরকে স্বাক্ষরতা জ্ঞান প্রদান করা হয়েছ।  আগামী ৮ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো আন্তজাতিক স্বাক্ষতা দিবস পালন উপলক্ষে রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এসব কথা বলেন।

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো’র আওতায় বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সাক্ষরতা জ্ঞান প্রদান করা হয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাক্ষরতা বিস্তারে এ বিশাল অর্জনের জন্য বাংলাদেশ সরকার ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতিস্বরূপ ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা পুরস্কার ১৯৯৮’ লাভ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে এ পুরস্কার গ্রহণ করেন। ‘সবার জন্য শিক্ষা’ এবং ‘সহস্রাব্ধ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসমূহ’ সাফল্যজনকভাবে অর্জনের জন্য ২০১৪ সালে ইউনেস্কো মহাসচিব ইরিনা বোকোভা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘শান্তি বৃক্ষ’ পদক প্রদান করেন। সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় দেশে বর্তমানে সাক্ষরতার হার শতকরা ৭৪.৭ ভাগে উন্নীত হয়েছে (বিবিএস এর সর্বশেষ তথ্য) যা ২০০৫ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় ছিল শতকরা মাত্র ৫৩.৫ ভাগ।
আগামী ৮ সেপ্টেম্বর সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস’। ইউনেস্কো’র উদ্যোগে ১৯৬৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস’ পালন করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার প্রতিবছর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করে আসছে। এ বছরও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এ বছরে ইউনেস্কো কর্তৃক প্রতিপাদ্য হলো: “খরঃবৎধপু ঃবধপযরহম ধহফ ষবধৎহরহম রহ ঃযব ঈঙঠওউ-১৯ পৎরংরং ধহফ নবুড়হফ রিঃয ধ ভড়পঁং ড়হ ঃযব ৎড়ষব ড়ভ বফঁপধঃড়ৎং ধহফ পযধহমরহম ঢ়বফধমড়মরবং.” এ প্রতিপাদ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে বাংলায় প্রতিপাদ্য করা হয়েছে ‘‘কোভিড-১৯ সংকটঃ সাক্ষরতা শিক্ষায় পরিবর্তনশীল শিখন-শেখানো কৌশল এবং শিক্ষাবিদদের ভূমিকা’’।
নব্বই-এর দশকের শুরু থেকে ‘সবার জন্য শিক্ষা’ অর্জনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশেও সাক্ষরতা বিস্তারে বিভিন্ন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয় । নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরতা প্রদান, অব্যাহত ও জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, কর্মসংস্থান, আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশু-কিশোরদের শিক্ষার বিকল্প সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সরকার উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন’ ২০১৪ প্রণয়ন করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)’ এবং জাতীয় অঙ্গীকারের সকল লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সরকার ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০২০) প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে চলছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের চতুর্থ লক্ষ্যে সাক্ষরতা বিস্তার, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির জন্য ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সাব-সেক্টরের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সংক্ষিপ্তভাবে সংবাদ সম্মলনের তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো :
মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা) : এ কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলায় নির্বাচিত ২৫০টি উপজেলার ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৪৫ লক্ষ নিরক্ষরকে সাক্ষরতা জ্ঞান প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে ১৩৪টি উপজেলায় শিখন কেন্দ্রের মাধ্যমে তেইশ লক্ষ উনষাট হাজার চার শত একচল্লিশ জন নিরক্ষরকে সাক্ষরতা প্রদান করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী অর্থাৎ মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আরও ২১ লক্ষ নিরক্ষরকে সাক্ষরতা প্রদান করার কার্যক্রম চলমান আছে।
পিইডিপি-৪ এর আওতায় বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশুদের জন্য উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা : দারিদ্র্য, অনগ্রসরতা, শিশুশ্রম, ভৌগলিক প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি কারণে এখনও অনেক শিশু বিদ্যালয় বহির্ভূত রয়েছে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এসব শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পিইডিপি-৪ এর আওতায় ৮-১৪ বছর বয়সী বিদ্যালয় বহির্ভূত ১০ লক্ষ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১ লক্ষ শিশুকে পাইলট প্রকল্পের আওতায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ, গাইবান্ধা, সিলেট ও সুনামগঞ্জ এ ৬টি জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান কার্যক্রম চলমান আছে। করোনাকালীন এসব শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম সংসদ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও কমিউনিটি রেডিও,র মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের সুপার ভাইজার, মনিটরিং অফিসার ও কেন্দ্র শিক্ষক সার্বক্ষণিকভাবে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী-অভিবাবকদের সাথে যোগাযোগ করে লেখাপড়ার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। অবশিষ্ট ৯ লক্ষ শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের কার্যক্রম কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যথাশীঘ্র শুরু করা হবে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ড: উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন, ২০১৪ এর আলোকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বোর্ডের মাধ্যমে সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান যারা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে জড়িত তাদের প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন, শিক্ষকদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিরূপণ, শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ ও সনদ প্রদান করা হবে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (এনএফইডিপি) – ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং এসডিজি-৪ এর লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার ঝবপঃড়ৎ ডরফব অঢ়ঢ়ৎড়ধপয চৎড়মৎধস (ঝডঅচ) হিসেবে ‘ঘড়হ-ঋড়ৎসধষ ঊফঁপধঃরড়হ উবাবষড়ঢ়সবহঃ চৎড়মৎধস (ঘঋঊউচ)’ নামক একটি কর্মসূচিভিত্তিক প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রস্তুত করা হয়েছে। উক্ত কর্মসূচী যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষান্তে এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুারোর মাঠ পর্যায়ে তথা উপজেলা পর্যায়ে সেট-আপ তৈরীর পর সক্ষমতা বৃদ্ধির আলোকে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
আসুন, সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে দেশের সকল নিরক্ষর মানুষকে সাক্ষরতা জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে মানবসম্পদে পরিণত করার এ মহান দায়িত্ব পালন করি। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করাসহ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
দেশের সকল মানুষকে শিক্ষিত, সচেতন ও কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য আপনাদের আমি আন্তরিকভাবে আহবান জানাচ্ছি। পরিশেষে আমাদের আহবানে এ সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :