নওগাঁ প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ
‘আষাঢ়-শ্রাবণ, মানে না তো মন, ঝড়ো ঝড়ো ঝড়ো ঝড়ো ঝড়েছে’ বাংলা দিনপঞ্জির হিসাবে এখন চলছে শ্রাবণ মাস। বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবণেই ভারি মৌসুমি বৃষ্টিপাত হয়। বর্ষা যাই যাই করলেও ধান উৎপাদনে সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে পরিচিত উত্তরের নওগাঁ জেলায় স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা নেই। ঝড়ছে না প্রয়োজনীয় বৃষ্টি।
আমন আবাদের জন্য জমি তৈরি জমিতে লাগানো চারা বাঁচাতে এখন কৃষকের ভরসা ভূগর্ভস্থ পানি। সেচ নির্ভর আমন চাষে খরচ বাড়ছে কৃষকের। এতে আমন চাষ ব্যাহত হবার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার ১১ উপজেলার কমবেশি সব এলাকাতেই এবার খরার কবলে পড়েছে আমন।
এরমধ্যে নিয়ামতপুর, পোরশা, সাপাহার, পতিতলা ও মহাদেবপুর উপজেলার অবস্থা বেশি খারাপ। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকেরা গভীর-অগভীর নলকূপ চালু করে আমনের চারা লাগাচ্ছেন। এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ কাজও ব্যাহত হচ্ছে। সঠিক সময়ে জমিতে সেচ দিতে না পারায় আমনের খেত ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বৃষ্টিপাত কিছুটা কম হলেও আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে এখনই অতটা চিন্তিত হওয়ার কারণ দেখছি না। আমনের মৌসুম কেবলই শুরু হয়েছে। পুরো আগস্ট মাসজুড়েই আমনের চারা লাগানো যাবে। ইতোমধ্যে ২০ শতাংশ জমিতে চারা লাগানো হয়েছে। আশা করছি, সঠিক সময়েই আমনের চারা লাগানো সম্পন্ন হবে। তবে যেসব কৃষক সেচ দিয়ে চাষাবাদ করছে তাদের খরচ বাড়বে।
আদমদীঘিতে বৃষ্টির অপেক্ষা
নিজস্ব সংবাদদাতা, আদমদীঘি, বগুড়া থেকে জানান, আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণের দেড় সপ্তাহ অতিক্রম করলেও দেখা নেই বৃষ্টির ছিটেফোঁটা। শুকনো মাঠে চরে বেড়াচ্ছে গবাদি পশুর দল। পানি অভাবে আদমদীঘি উপজেলার অনেক মাঠে শুরু করা যাচ্ছে না আমন চাষাবাদ।
ফলে কৃষকরা আমন আবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। গেল আষাঢ় মাসের শেষ সপ্তাহে হাল্কা বৃষ্টি হওয়ার পর থেকে চলছে টানা অনাবৃষ্টি। নালা ও খালের পানি সেচ দিয়ে বীজতলায় তৈরি করা চারার বয়স বাড়ছে। পানির অভাবে আমনের জমি তৈরি ও চারা লাগাতে পারছেন না কৃষক। নিরুপায় হয়ে কিছু কিছু এলাকার কৃষক গভীর ও অগভীর নলকূপ থেকে জমিতে সেচ দিয়ে চাষ শুরু করেছেন। ফলে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৮৫ হাজার বিঘা জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নের দমদমা গ্রামের কৃষক গোলাম মর্তুজা নয়ন বলেন, এই মৌসুমে তিনি প্রায় ২০ বিঘা জমিতে আমন চাষ করবেন। কিন্তু ভরা বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় এখনো অর্ধেক জমিতে আমন চারা রোপণ করতে পারেনি।
এদিকে চারার বয়স বেড়ে চলায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন নয়নসহ শ’ শ’ কৃষক। উপজেলা কৃষি অফিসার মিঠু চন্দ্র অধিকারী জানান, এ অবস্থায় কৃষকদের সম্পূরক সেচ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে বাড়তি খরচ হলেও উৎপাদনের ওপর খুব একটা প্রভাব পড়বে না, বিলম্ব হলেও চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।
এটিভি/এস