নেত্রকোনা থেকে মোস্তাফিজুর রহমান, এটিভি সংবাদ
ঈদুল আজহার আর মাত্র বাকি কয়েক দিন। ইতিমধ্যে নেত্রকোণায় জমে উঠেছে আসন্ন ঈদুল আজহার পশুর হাট। ক্রেতাদের উপস্থিতি কম থাকার কারণ হলো নেত্রকোণায় স্বরণকালের ভয়াবহ বন্যায় মানুষ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। তাই গরুর দাম কিছুটা কমে মনে হচ্ছে। এতে হতাশাগ্রস্ত খামারি ও কৃষকরা। কয়েকটি পশুর হাটের সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রখর রোদ, বৃষ্টি গরমের মধ্যেই হাটে পশু বেচাকেনা হচ্ছে তবে খুব কম। জেলার দশটি উপজেলার প্রতিটি পশুর হাট সরগরম হয়ে উঠেছে।
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নেত্রকোণার পশুর হাটগুলো জমে উঠা শুরু করেছে। তবে এসব হাটে পুরো পুরি ভাবে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি।
প্রতি বছর কোরবানির সময় হাট গুলোতে প্রখর রোদেও বৃষ্টির মধ্যে কেনা বেচা চলে অবিরাম, প্রচুর আমদানির কারনে পশু রাখার ঠাই পর্যন্ত থাকেনা সকল হাটে। তবে এবার তেমন চিত্র দেখা যায় না। ১লা জুলাই কলমাকান্দা উপজেলার গুতুরা বাজারের পশুর হাট ও ৩ জুলাই রবিবার নেত্রকোণা সদর উপজেলার আমতলা পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা উপজেলার এই বাজারে এ বছর ভারতীয় গরুর আমদানি কম, ও আমতলা বাজারে ও একই চিত্র। জেলার প্রতিটি হাট-বাজার দখল করে রেখেছে দেশীয় গরু।হাটে বিপুল পরিমান বিভিন্ন জাতের দেশি ও বিদেশি গরু আমদানি করা হয়।
এবছর প্রতিটি বাজারে বড় পশুর তুলনায় মাঝারি পশু অনেক বেশি। এই বাজার গুলোতে সব ধরনের ছোট বড় গরু বেশি ক্রয় বিক্রয় করা হয়। যার যে পশুটি পছন্দ হচ্ছে সে সেটিই নিয়ে যাচ্ছেন। এবছর প্রতিটি বাজার দখল করে রেখেছে মাঝারি ও ছোট গরু।
সদর উপজেলার ব্যবসায়ী হায়দার আলী তিনি জানান, ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীরা মোটেও সুবিধা করতে পারেনি তিনি জানান, ঈদকে ঘিরে গত বছর ভারতীয় গরুর অনেক চাহিদা থাকলে ও এবার দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। এবার বাজারে ভারতীয় গরুর চাহিদা অনেক কমে গেছে। ক্রেতারা দেশীয় গরু খুজছেন সবার আগে। কিন্তু বর্তমানে দেশে বন্যার প্রভাবে দূর ক্রেতা না আশায় একটু দাম কম।গরু বেশি দামে কেনা থাকায় লোকসানের মধ্যে আমরা।
নজরুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা জানান, দেশি গরু কিনতে চাই। গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম একটু বেশি। এবছর বছর যে ১০০ কেজি ওজনের ১টি গরু কিনতে ৬০ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে, গতবার সেই গরু ছিল ৫৮ হাজার টাকা। তবে মাংশের দামের তুলনায় এবার একটু হলেও গরুর দাম কম। আমতলা বাজারে আবার ২০০ কেজি ওজনের একটি লাল গরুর দাম হাঁকছে ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায়। বাজারে গরুর রং, মাংশের ওজন ও কুরবানি করার উপযোগী ভালো গরুর দাম ও চাহিদা একটু বেশি। কুরবানি করার উপযোগী ১২-১৪ কেজি ওজনের ১টি খাশি ছাগল বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ হাজার টাকায়। আবার বিক্রেতারা ২০ থেকে ২৫ কেজি ওজনে একটি লাল রাম ছাগলের দাম হাঁকছেন ২৫-২৬ হাজার টাকায়।
নেত্রকোণা সদরের মদনপুর পশুর হাটে কথা হয় বিক্রেতা আইয়ুব আলীর সঙ্গে তিনি জানান, সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কড়া নজরদারির কারণে ভারতীয় গরু তেমন আসতে পারেনি। এতে অনেক খুশি খামারীরা। কিন্তু নেত্রকোণায় স্বরণকালের ভয়াবহ বন্যার প্রভাবে ক্রেতা ও ভালো দাম না পাওয়ায় হতাশ তারা। নেত্রকোণার খামারীরা জানায়, গত বছরের তুলনায় দাম একটু কম। কারন বর্তমানে দেশে বন্যার প্রভাবে দুর দুরান্ত থেকে ক্রেতা না আশায় একটু দাম কম।
আমতলা পশুর হাটের ক্রেতা মো. বদরূল আলম বলেন অন্য হাটে যে গরুর দাম ছিল ৬০ হাজার সেই গরু আজ প্রায় একটু কম দামে বিক্রি হয়েছে। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন মাংসের তুলনায় হাটে গরুর দাম একটু কম।
নেত্রকোণা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. শহিদুল্লাহ জানায়, নেত্রকোণা জেলায় পারিবারিক খামার মিলেও গরুরখামার সংখ্যা প্রায় ১১,২৫০ এবার আর কুবানী যোগ্য পশুর সংখ্যা ৯৬,১০৯টি। জেলায় স্থায়ী পশুর হাট ৪৩ টি আর অস্থায়ী পশুর হাটের জন্যে আবেদন জমা পরেছে ১২৫টি। আর গত বছর কুরবানিতে জবাই করা হয়েছিল অসংখ্য। জেলায় কুরবনী করার জন্য পশুর চাহিদা ৯০,০০০ হাজারেও বেশি। এবার জেলায় চাহিদা পুরন করে অন্য জেলাই পশু বিক্রী করা সম্ভব বলে জানান তিনি। ঈদে ক্রেতারা যাতে সুস্থ সবল গরু পেতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই অনেক আগে থেকেই খামারীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি কোবানির হাট গুলোতে তাদের মেডিকেলটিম কাজ করছে।
নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস বলেন, কোরবানী উপলক্ষে জেলার প্রতিটি পশুর হাটে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।এছাড়া শান্তি বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তত রয়েছে। হাট-বাজারে সর্বত্র পুলিশের ব্যাপক নজরদারি রয়েছে।