atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > অন্যান্য > পাঁচ প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বৃদ্ধ বাবার মায়ার সংসার

পাঁচ প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বৃদ্ধ বাবার মায়ার সংসার

নিজস্ব প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ 

যে বয়সে ছেলেদের ওপর নির্ভরশীলতা থাকার কথা বাবার, সেখানে প্রাপ্তবয়স্ক পাঁচ শারীরিক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছেলের দেখাশুনা করতে হচ্ছে আশি বছরের, উপার্জনে অক্ষম এক বাবাকে। তিনি নীলফামারীর সৈয়দপুরের অশীতিপর আব্দুস সাত্তার। চরম অর্থকষ্টের মধ্যেও স্নেহের মায়ায় বেঁধে রেখেছেন প্রতিবন্ধী ছেলেদের।

আট সন্তানের মধ্যে পাঁচজনই শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় মনে দুঃখ থাকলেও কখনই প্রকাশ করেননি তিনি, ছেলেদের আগলে রেখেছেন অকৃত্রিম ভালোবাসায়।

সৈয়দপুর উপজেলার ইসলামবাগ পুরাতন ঈদগাহ এলাকার টিনের ছাউনির ভাঙ্গাচোরা তিনরুম বিশিষ্ট একটি বাড়িতে বসবাস করেন প্রতিবন্ধী এহসান, মুন্না, শওকাত, এরসাদ ও বড় মেয়েসহ আব্দুস সাত্তার। বাড়ির সর্বত্র চরম দারিদ্র্যের ছাপ। কিন্তু স্নেহ-ভালোবাসার সামান্যতম ঘাটতি নেই এই পরিবারটিতে। অবসরপ্রাপ্ত রেলওয়ে কারখানার শ্রমিক আব্দুস সাত্তারের আট সন্তানের মধ্যে পাঁচ ছেলের সবাই ক্ষুদ্রাকৃতি মাথা ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়েই জন্ম নেয়। এদেরই একজন সম্প্রতি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এখনও তিনি বাকি চার ছেলেকে বুকে আগলে রেখেছেন।

প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম নিয়ে কখনোই ক্ষুব্ধ না হয়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে পিতৃ ও মাতৃ স্নেহে লালনপালন করে বড় করেন। স্ত্রী মারা গেলে পুনরায় বিয়ে করেন আব্দুস সাত্তার। ২ টি কন্যা সন্তান রেখে দ্বিতীয় স্ত্রীও মারা যায়। বর্তমানে বিধবা বড় মেয়ে রান্নাবান্নার দায়িত্ব পালন করলেও ৪ সন্তানের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন বাবা নিজেই।

এই চার প্রতিবন্ধী ছেলেকে ঘিরে সংগ্রাম ও ত্যাগের জীবন আব্দুস সাত্তারের। হার না মানা এই সংগ্রামে প্রাপ্তি শূন্য জেনেও হাসিমুখে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন এই যোদ্ধা। তবে চাপা আক্ষেপ আছে, চরম দারিদ্র্যের কারণে ঈদ বা উৎসবে ছেলেদের ভালো খাবার, পোশাক দিতে পারেননি কখনো। অভাবী সংসারে এদের দেখাশোনা, চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। বয়সের কারণে উপার্জনে অক্ষম হওয়ায় সামান্য পেনশন ও তিন ছেলের ভাতার টাকায় সংসার চলাতে হাঁপিয়ে উঠেছেন। পাড়া প্রতিবেশীরা বলছে, বাবা বেঁচে আছে, দেখাশুনা করছে। তার মৃত্যুর পর কিভাবে কাটবে তাদের জীবন?

সময় সংবাদের কথা হয় জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া আশিতিপর আব্দুস ছাত্তারের সঙ্গে।

উপার্জনে অক্ষম আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘মাঝেমধ্যে চরম হতাশা আসে, তখন মনে হয় আমার সাথেই কেন সৃষ্টিকর্তার এমন অবিচার। পরক্ষণেই ভাবি, না এমন ভাবা ঠিক না। সন্তান তো আমার, আমাকেই এদের দেখাশুনা করতে হবে। বাস্তবতা থেকে পালিয়ে এই নিষ্পাপ ছেলেদের বিপদে ফেলে কি পাব?’

‘প্রথমে আমরা দুজন মিলে দেখাশুনা করতাম। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ায় তাদের দেখাশুনার জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করি। সেও মারা যাওয়ার পর এখন আমার বিধবা মেয়ে রান্নার কাজ করলেও এখনও আমিই সব করি তাদের। মাত্র ৭ হাজার টাকা পেনশন ও ৩ ছেলের পঙ্গু ভাতার টাকা দিয়ে চলে সংসার। এক ছেলের এখনও প্রতিবন্ধী কার্ড হয়নি,’ যোগ করেন আব্দুস সাত্তার।

তিনি বলেন, ‘খুবই কষ্ট পাই যখন, ঈদে তাদের মুখে ভালো খাবার বা পরিধানে নতুন কাপড় দিতে পারি না। বাইরে বের হলেই যেখানে সেখানে চলে যায়, পথ ভুলে গেলে মানুষেরা নিয়ে এসে দিয়ে যায়। ভয় লাগে কখন কি হয়ে যায়। চিকিৎসার অভাবে এক ছেলে সম্প্রতি মারা গেল। আমি যত দিন বেঁচে আছি তাদের অসুবিধা হবে না, কিন্তু মারা যাবার পর তাদের কি হবে বলতে পারি না।’

সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোকছেদুল মোমিন বলেন, ‘আমরা সরকারি সব ধরনের সাহায্য দেওয়ার চেষ্টা করব। তবে প্রতিবন্ধী ছেলেদের বাবা মারা যাওয়ার পর কী হবে সেদিকে নজর রাখতে হবে।”
‘বৃদ্ধ বাবার ছেলেদের প্রতি এধরনের ভালোবাসা বিরল ঘটনা,’ বলেন উপজেলা চেয়ারম্যান।

 

এটিভি/এস

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :