আহসান হাবীব, এটিভি সংবাদ
উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনের প্রার্থী হওয়া নিয়ে এবার তর্কবিতর্কে জড়ালেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এমপি। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে।
শাজাহান খান দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে ছেলে আসিবুর রহমান খানকে মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করিয়েছেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে তাঁর সঙ্গে ১৮ এপ্রিল টেলিফোনে কথা বলেন দলের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি। কিন্তু শাজাহান খান তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। ফলে শেষ দিনে গত সোমবার তাঁর ছেলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি।
এ অবস্থায় শাজাহান খান গতকাল সন্ধ্যার পর প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এসে দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর কক্ষে যান। এ সময় তাঁর উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনি তো কথা শুনলেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তও মানলেন না।’
এ সময় সেতুমন্ত্রী ক্ষোভের পাশাপাশি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সেখানে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতারা তিরস্কার করেন শাজাহান খানকে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা মিডিয়াকে জানিয়েছেন, শাজাহান খান এক পর্যায়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশে বলেন, রাজনীতির ধারাবাহিকতায় ছেলে আসিবুর রাজনীতিতে এসেছে। এ জন্যই সে প্রার্থী হয়েছে। জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও এমপির স্বজনের নির্বাচন না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। প্রতিউত্তরে শাজাহান খান বলেন, অনেকেরই নিকটাত্মীয় রাজনীতিতে আছেন।
ওবায়দুল কাদের এ সময় শাজাহান খানকে বলেন, ‘আপনি কখনোই কোনো কথা শোনেন না। এটা ঠিক না।’ এর জবাবে শাজাহান খান বলেন, ‘আপনার সিদ্ধান্ত দেরিতে জানিয়েছেন। আগে জানালে ভালো হতো।’ তখন ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সিদ্ধান্তটি আমার নয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কোন সিদ্ধান্ত কখন দেবেন, সেটা কি আমাদের জিজ্ঞাসা করে দেবেন?’
দু’জনের এমন তর্কবিতর্কের সময় উপস্থিত কয়েক নেতা মিডিয়াকে জানান, শাজাহান খান কিছুটা উচ্চস্বরে কথা বলছিলেন। ফলে সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ নিয়ে বিরক্ত হন ওবায়দুল কাদেরও। তিনি শাজাহান খানের উদ্দেশে বলেন, ‘এখানে দলের অনেক নেতাকর্মী রয়েছেন। এর পরও আপনি সবার সামনে এসব অপ্রিয় কথা কেন বলছেন?
এ সময় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুই সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, কার্যনির্বাহী সংসদের দুই সদস্য আনিসুর রহমান ও সাহাবুদ্দিন ফরাজী, মশিউর রহমান হুমায়ুন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী লোটন, বলরাম পোদ্দার এবং শাহজাদা মহিউদ্দিন।
ছাড় পাবেন বর্তমান চেয়ারম্যান
উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানরা ছাড় পাবেন। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেছেন, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান অনেকেই মন্ত্রী ও এমপিদের স্বজন। তাদের বেলায় প্রসঙ্গটি প্রযোজ্য হবে না। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির খালাতো ভাই হারুন-অর রশিদ হীরা। তাদের সম্পর্ক নিকটাত্মীয়ের মধ্যে পড়ে না। নিকটাত্মীয় বলতে বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন, ছেলে ও ছেলের স্ত্রী, মেয়ে ও মেয়ের স্বামীকে বোঝায়। তা ছাড়া হীরা বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান।