প্রিন্ট এর তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪, ৫:২৪ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ১, ২০২৪, ৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ
বিষপান একসঙ্গে:স্বামী হাসপাতালে, স্ত্রীর মৃত্যু
নিউজ ডেস্ক, এটিভি সংবাদ :
কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলায় ধার দেয়া টাকা ফেরত দিতে না পারায় অসহায় পরিবারের এক গৃহবধূকে জিম্মি করে দীর্ঘদিন ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। পরে সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের স্বামী-স্ত্রী বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বিষপানের পর তাদের হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক স্ত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন এবং স্বামী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বুধবার (২৯ মে) দুপুরের দিকে উপজেলা সদরের কলেজ পাড়া এলাকার স্বামী জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী নারীর স্বামী জাহাঙ্গীর আলম ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সংসারে অভাব অনটনের কারণে জহির মন্ডলপাড়া গ্রামের জয়নাল আলীর কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা ধার নেন জাহাঙ্গীর-আশা দম্পতি। কিন্তু ধারের টাকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদার টাকা চেয়ে বসে। সেসময় হাতে টাকা না থাকায় আশা খাতুন জানান, টাকা হলেই পরিশোধ করে দিবেন ধারের টাকা। কিন্তু পাওনাদার তার টাকাটা পুনরায় চেয়ে বসে এবং টাকা না দিতে পারায় আশা খাতুনকে শারীরিকভাবে অবৈধ সম্পর্কের প্রস্তাব দেয়। আশার পরিবার অভাবগ্রস্ত হওয়ায় পাওনাদারের অনৈতিক কাজের প্রস্তাব মেনে নেন বলে জানায় নিহত আশার স্বামী স্থানীয়রা।
পরবর্তীতে জয়নাল তার সঙ্গে শুক্কুর আলী নামের একজনকে সঙ্গে নিয়ে এসে শারীরিক সম্পর্ক করায়। এরপর তারা দুজন আবারও সোলেমান নামের আরেকজনকে সঙ্গে নিয়ে এসে শারীরিক সম্পর্ক করেন এবং সোলেমান গোপনে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে রাখেন। পরে তাকেও যদি শারীরিক সম্পর্ক করতে না দেয় তাহলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তিনিও শারীরিক সম্পর্ক করেন।
এভাবে প্রতিনিয়ত ভুক্তভোগী আশা খাতুনের বাড়িতে শারীরিক সম্পর্ক করতে আসায় তিনি অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। পাশাপাশি তার স্বামী জাহাঙ্গীর স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্কের কথা লোকমুখে জানতে পারেন। পরে কৌশলে স্বামী তার স্ত্রীর মুখে সবকিছু শুনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।
পরে স্বামী-স্ত্রী মিলে লোকলজ্জার ভয়ে গত ২৪ মে দুপুরে জমিতে দেয়া কীটনাশক পান করেন। পরে তাদের দুজনকেই স্থানীয়রা উদ্ধার করে রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকের প্রাথমিক চিকিৎসায় জাহাঙ্গীর কিছুটা সুস্থ হলেও আশা খাতুনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে জামালপুর সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
সেখানে তিনদিন চিকিৎসা গ্রহণের পর আশা খাতুনের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে সেখান থেকে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। কিন্তু পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না নিয়ে তারা সোমবার (২৮ মে) রাতে বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরদিন বুধবার (২৯ মে) দুপুর আনুমানিক ২টায় আশা খাতুন তার নিজ বাড়িতেই মারা যান।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হলে দুজনই বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে স্ত্রী মারা যায়। মৃত্যুর আগে ওই নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জয়নাল জানান, আমি কিছুই জানি না সব মিথ্যা কথা। তবে টাকা পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং ধর্ষণের ঘটনাটি অস্বীকার করলেও ২০ হাজার টাকা দিয়ে মীমাংসা করার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।
রাজিবপুর সদর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মিরর জানান, আমি জরুরী কাজে ঢাকায় এসেছি। গৃহবধূকে ধর্ষণের বিষয়টি শুনেছি। আমি স্থানীয় ইউপি সদস্যকে খোঁজখবর নিতে বলেছি। যারা অপরাধী তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
রাজীবপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান বলেন, নিহতের মামার তথ্যের ভিত্তিতে থানায় অপমৃত্যু( ইউডি) মামলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি আমরা।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম জানান, থানায় ধর্ষণের অভিযোগ না করেই মরদেহ দাফনের প্রস্তুতি নেয়। এ সংবাদ পেয়ে পুলিশ নিহতের বাড়ি থেকে মরদেহ নিয়ে এসে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করে। তিনি জানান, ময়না তদন্তের রিপোর্ট দ্রুত সময় পেতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। রিপোর্ট অনুযায়ী দ্রুততম সময়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Copyright © 2023 Atv Sangbad (A Concern of Aparadh Anusondhan Ltd) All rights reserved