অনুসন্ধানী প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ
মানিকগঞ্জ সিংগাইর সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল হকের বিরুদ্ধে এক নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ ওঠেছে। ভুক্তভোগী ওই নারী পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেছেন। ঘটনার পর থেকে পালিয়ে রয়েছেন অভিযুক্ত সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল হক।
একটি পোশাক কারখানার উচ্চ পদে কর্মরত ওই নারী সাংবাদিকদের জানান, ৯ মাস আগে একটি ঘটনার জেরে সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল হকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর দুইজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের কথা বলে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয় একাধিক বার। গত মার্চ মাসে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি রেজাউলের স্ত্রী জেনে যায়। রেজাউল তাকে বলেছিলো তার সন্তান একটু বড় হলে স্ত্রীসহ সন্তানকে কানাডায় পাঠিয়ে দিবেন। তাদের মাঝে-মধ্যে ঝগড়া হলেও আবার মধুর সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। গত রোববার (৩১ জুলাই) রাতে রেজাউলকে কয়েকবার ফোন করার পর সে বারবার কেটে দেয়। এরপর রাত ১টার দিকে আবার ফোন দেয়া হলে ওই ফোন রেজাউল হকের স্ত্রী ধরেন।
এ সময় তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে রেজাউলের স্ত্রী। পরের দিন সোমবার সকাল ১০টার দিকে রেজাউলের বাসায় গেলে তার স্ত্রী মহিলা পুলিশ দিয়ে তাকে মারধর করে ও মোবাইল ফোন কেড়ে রাখে। পরে পুলিশ এসে তাকে থানায় নিয়ে যায়। বিকেলের দিকে রেজাউল হক থানায় এসে ওসির কক্ষে ওসি ও তার মায়ের সামনে তাকে আগামী ৮ আগস্ট, ২০২২ ইং বিয়ে করবেন ও রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের বাড়িতে আসবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তার ওই প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর তিনি থানা থেকে বাড়ি চলে যান।
রাতে রেজাউল হক তাদের বাড়িতে না এসে স্থানীয় চেয়ারম্যান রিপন দেওয়ান ও সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েদুল ইসলামকে পাঠান। তারা এসে তাকে টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মীমাংসার প্রস্তাব দেন। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতে রেজাউল হকের চাকরি রক্ষার স্বার্থে তার কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ নেন রেজাউল হকের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। চেয়ারম্যান রিপন দেওয়ান ও আওয়ামী লীগ নেতা সায়েদুল ইসলাম সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল হকের পক্ষে তাকে একটি লিখিত দেন যে আগামী ৮ আগস্ট রেজাউল বিয়ে করবেন, যদি বিয়ে না করেন তবে সে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
তিনি আরো জানান, মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সকাল থেকে সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল হকের ব্যক্তিগত ও সরকারি মোবাইল বন্ধ থাকার কারণে ওই নারী মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলতে আসেন। কিন্তু পুলিশ সুপার মিটিংয়ে থাকার কারণে সেই সাক্ষাৎ হয়নি। এরপর তিনি সিংগাইর থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে তার মোবাইল ফোন ফেরত চান। ওই সময় সিংগাইর থানার অফিসার ইনচার্জ থানায় না থাকায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ তাকে কোন সাহায্য করবে না। তিনি একদিনের জন্য হলেও সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল হককে বিয়ে করবেন। বিয়ে যদি না করেন তবে থানায় এসে গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করবেন। সেই সঙ্গে তিনি ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলেও জানান।
সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েদুল ইসলাম জানান, সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল হকের সঙ্গে কথা বলেই তিনি ওই নারীর সঙ্গে সোমবার (১ আগস্ট) রাতে দেখা করতে যান। তবে ওই নারীর সঙ্গে মীমাংসা করার জন্য সময় চেয়ে একটি বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিলো। কিন্তু ওই নারী সময় না দিয়েই সাংবাদিকসহ পুলিশ সুপাররের কাছে অভিযোগ করেছেন।
এদিকে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিকেলে ওই ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খানের অফিসে দেখা করেন। সেখানে তিনি পুলিশ সুপারের কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান সাংবাদিকদের জানান, ওই নারীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে। ওই নারী মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। তাকে লিখিতভাবে অভিযোগ দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এছাড়া অভিযুক্ত সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল হকের অফিসে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার সরকারী মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে। তবে সোমবার (১ আগস্ট) তিনি বলেছিলেন, ওই নারীর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। একটু ভুল বোঝাবুঝির কারণে ওই নারী তার বাসায় এসেছিলো। এ সময় তার স্ত্রী সাথে একটু ঝামেলা হয়।
বিষয়টি বড়ই ন্যক্কারজনক। নারীলোভী দুশ্চরিত্র এ ধরনের পুলিশ কর্মকর্তাদের কারণে গোটা পুলিশ বিভাগ আজ সমাজের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। অভিযুক্ত সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল হকের বিরুদ্ধে দ্রুত বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে গোটা জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হবে পুলিশ বিভাগ।
উল্লেখিত বিষয়টি মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান বিভাগীয় ব্যবস্থার জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন এমনটি আশা করছেন দেশের সচেতন মহল।