নিউজ ডেস্ক, এটিভি সংবাদ :
পটুয়াখালীর বাউফলে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। মূল ঠিকাদারের বদলে প্রভাব খাটিয়ে কাজ করছেন একজন সাব-ঠিকাদার। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে করা হচ্ছে সব কাজ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।
পটুয়াখালীর বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সংস্কার কাজে ঠিকাদাররের বিরুদ্ধে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরনো ভবনের ডায়রিয়া ওয়ার্ড সংস্কারে ১০ লাখ ৭৬ হাজার ৭৮৭ টাকা, পুরনো ভবন সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণ ও স্যানিটারি কাজে ৪৩ লাখ ১৫ হাজার ৯৭২ টাকা, চিকিৎসক কোয়ার্টার সংস্কারে ২৮ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩১ টাকা এবং চতুর্থ শ্রেণির কোয়ার্টার সংস্কারে ৩১ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭১ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই চারটি প্রকল্পে মোট এক কোটি ১৪ লাখ ৬ হাজার ২৬১ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। কাজগুলো করার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সঙ্গে মের্সাস বাবর অ্যাসোসিয়েটস নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হয়।
গত বছরের ৫ ডিসেম্বর ওই প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ। চুক্তি অনুযায়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরনো এসব ভবন আস্তরকরণ, জানালায় লোহার গ্রিল, কাঠের দরজা, জানালায় গ্লাস ও স্যানিটারি কাজ এবং বৈদ্যুতিক লাইন ও বিভিন্ন ওয়ার্ডে টাইলস স্থাপন এবং রং করাসহ তিনটি ভবনে ১৯০টি ক্যাটাগরিতে সংস্কার কাজ করার কথা। কাজটি বাবর এসোসিয়েটস পেলেও পটুয়াখালীর হায়দার খান নামে এক প্রভাবশালী ঠিকাদার সাব-ঠিকাদার হিসেবে কাজটি হাতিয়ে নেন।
অভিযোগ ওঠেছে, প্রভাব খাটিয়ে ও সংশ্লিষ্ট দফতরকে ম্যানেজ করে সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি করে যাচ্ছেন ওই সাব-ঠিকাদার।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুরনো ভবন, চিকিৎসক ও চতুর্থ শ্রেণির স্টাফের বাসভবনের ছাদ ও দেয়ালের খসেপড়া প্লাস্টার তুলে নতুন করে এক হাজার বর্গমিটার সিসি ও আরসিসি প্লাস্টার করার কথা থাকলেও খসে পড়া জায়গায় নামমাত্র প্লাস্টারের কাজ করা হয়েছে। দেয়াল ও ছাদের মরিচাপড়া রড ঘষামাজা করে প্লাস্টার করার কথা থাকলেও ঠিকাদার কোনো রকমে দায়সারা কাজ করছেন।
ছাদ ও দেয়ালের খসেপড়া প্লাস্টার তুলে নতুন করে ১০০০ বর্গমিটার সিসি ও আরসিসি প্লাস্টার করার কথা থাকলেও খসেপড়া জায়গায় নামমাত্র প্লাস্টারের কাজ করা হচ্ছে।
হাসপাতালের পুরুষ, মহিলা, শিশু ওয়ার্ড, অফিস কক্ষ, কর্মচারী ও চিকিৎসকদের বাসভবনে সাড়ে ১২০০ স্কয়ার মিটার নতুন টাইলস বসাতে ১৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকা ধরা হয়। ঠিকাদার পুরনো কিছু টাইলসের স্থলে নিম্নমানের কিছু নতুন টাইলস দিয়ে পুরানো টাইলসের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছেন।
এছাড়া ভবনগুলোর দরজা-জানালায় নিম্নমানের অপরিপক্ব কাঠ লাগানো হয়েছে। বাথরুমগুলোতে লাগানো হয় বাজারের সবচে কম মূল্যের প্লাস্টিক দরজা। পুরনো ভবনের নিচতলায় ও দ্বিতীয় তলার বারান্দায় লোহার গ্রিল লাগানোর কথা থাকলেও বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করে সাব-ঠিকাদারের লোকজন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চাপে পড়ে কিছু অংশে লোহার গ্রিল লাগালো হয়েছে। স্যানিটারি ও বৈদ্যুতিক লাইনের কাজেও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
নতুন লাইট, ফোল্ডার, সকেট, তার, বোর্ড, সুইচ লাগানোর কথা থাকলেও অধিকাংশ কাজই করা হয়েছে পুরানো জিনিসপত্র দিয়ে। তিনটি ফ্যানে ব্যবহার করা হয়েছে একটিমাত্র রেগুলেটার। এছাড়াও স্যানিটারি কাজেও ব্যাপক অনিয়ম করেছেন ওই সাব-ঠিকাদার।
হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ও কর্মচারী জানান, মূল ঠিকাদারের বদলে কাজ করেন অন্য এক সাব-ঠিকাদার। বেশ প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি মনগড়াভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, যার সব কিছুতেই অনিয়ম আর দুর্নীতি। চুক্তি অনুযায়ী তিনি কোনও কাজ করছেন না। মানহীন নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করছেন। প্রায় সোয়া কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও অর্ধেক টাকারও কাজ হচ্ছে না বলে দাবি করেন তারা।
এসব অনিয়মের অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে মেসার্স বাবর অ্যাসোসিয়েটসের মালিক মো. মামুন বলেন, ‘কাজটি আমি করছি না। পটুয়াখালীর হায়দার খান করছেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’
সাব-ঠিকাদার হায়দার খান বলেন, ‘কাজ নিয়ম মেনেই হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রকৌশলী কাজ তদারকি করছেন।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিংয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। অনিয়মের বিষয়টি জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। এত কিছুর পরেও সিডিউল মোতাবেক কাজ হচ্ছে না।’
কাজের তদারকি কর্মকর্তা উপ-সহকারি প্রকৌশলী সৈয়দ আল ইমরান বলেন, ‘কিছু ভুলত্রুটি হতে পারে; তবে শিডিউল অনুযায়ীই কাজ হচ্ছে।’
পটুয়াখালী জেলা জনস্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী মো. আবদুল গনী বলেন, ‘অনিয়ম করার সুযোগ নেই। যদি কোনও নির্মাণসামগ্রী নিম্নমানের হয়ে থাকে,তবে পরিবর্তন করে নতুনভাবে কাজ করানো হবে।’
Copyright © 2023 Atv Sangbad (A Concern of Aparadh Anusondhan Ltd) All rights reserved