ক্রীড়া ডেস্ক, এটিভি সংবাদ 

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। রিও দে জেনিরোর ঐতিহ্যবাহী মারাকানা স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরুর আগে গ্যালারিতে তুমুল মারামারি। মেসিরা মাঠ থেকে ড্রেসিংরুমেও ফিরে যান। গ্যালারি ঠাণ্ডা হলে প্রায় আধ ঘণ্টা পর মাঠে গড়ায় খেলা। কিন্তু প্রথমার্ধে দুই ফুটবল পরাশক্তির লড়াই ছিল সাদামাটা। বিরতির পর জমে ওঠে খেলা। আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেন নিকোলাস ওতামেন্দি। এরপর লাল কার্ড দেখেন ব্রাজিলের ওয়েলিংটন। ঘটনাবহুল ম্যাচে একমাত্র গোলটি আগলে রেখে মারাকানায় ২০২১’র কোপা জয়ের মতো আবারও জয়ের উৎসবে মাতে আর্জেন্টিনা।

২০২৬ বিশ্বকাপের দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইয়ে টানা চার জয়ের পর সবশেষ ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। ব্রাজিলকে হারিয়ে জয়ে ফেরা লিওনেল স্কালোনির দল ছয় ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষ স্থান সুদৃঢ় করল আরও।

অন্যদিকে ব্রাজিলের দুঃসময় বাড়ল আরও। টানা তৃতীয় হারের তেতো স্বাদ পাওয়া ফার্নান্দো দিনিসের দল নেমে গেল ষষ্ঠ স্থানে। রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের জন্য বাছাইয়ের পথচলা কঠিন হয়ে গেল আরও।

নেইমার, ভিনিসিউস জুনিয়র, কাসেমিরো, এদেরসন, দানিলো, রিচার্লিসন এবং মিলিতাও- নিয়মিত একাদশের এই ৭ জনকে চোটের কারণে না পাওয়ায় ব্রাজিলের শক্তি কমে। কিন্তু দমে যায়নি তারা। শুরু থেকে তারা চ্যালেঞ্জ জানাতে থাকে আর্জেন্টিনাকে; যদিও শক্তি নির্ভর খেলছিল তারা। প্রথমার্ধে ২২টি ফাউলের ১৬টিই ব্রাজিলের করা। দুই পক্ষের খেলায় ছিল না চেনা ধার। বলের নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা, তবে তিনটি প্রচেষ্টার কোনোটাই লক্ষ্যে রাখতে পারেনি তারা। ব্রাজিলের চার শটের একটি ছিল লক্ষ্যে। ৩৩ মিনিটে বক্সের ঠিক সামনে ব্রাজিলের এক খেলোয়াড় বল পাওয়ার আগেই দ্রুত ছুটে এসে হেডে ক্লিয়ার করেন এমি মার্তিনেজ। চার মিনিট পর রাফিনিয়ার ফ্রি কিক যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। ৪৩ মিনিটে কর্নারের পর বক্সের ঠিক বাইরে বল পেয়ে গাব্রিয়েল মার্তিনেল্লির বুলেট গতির ভলি এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে কর্নার হয়ে যায়। বিরতির আগে বলার মতো একমাত্র আক্রমণ ছিল এটিই!

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আর্জেন্টিনার রক্ষণে চাপ দিতে থাকে ব্রাজিল। জেসুস, রাফিনিয়ারা দুই উইং ধরে বক্সে ঢোকার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু আকুনিয়া, মলিনাদের দৃঢ়তায় সুবিধা করতে পারছিলেন না তারা।

৫৪ মিনিটে সতীর্থের লং পাস পেয়েছিলেন রাফিনিয়া; গায়ের সঙ্গে সেঁটে থাকা আকুনিয়াকে পেছনে ফেলে শটও নিয়েছিলেন কাছের পোস্টে। পথ আগলে দাঁড়ান এমি মার্তিনেজ। তিন মিনিট পর দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে বল নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া জেসুস ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি, বল চলে যায় ফাঁকায় থাকা মার্তিনেল্লির পায়ে। তার শট ঝাঁপিয়ে আটকান গোলরক্ষক। ৬৩ মিনিটে মারাকানার গ্যালারি স্তব্ধ করে দিয়ে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। জিওভান্নি লো সেলসোর কর্নারে অনেকটা লাফিয়ে করা হেডে পোস্টের ডান কোণ দিয়ে জাল খুঁজে নেন ওতামেন্দি। একটু পরই আকুনিকে তুলে তাগলিয়াফিকোকে নামান আর্জেন্টিনা কোচ। ৭৭ মিনিটে দুটি পরিবর্তন আনেন স্কালোনি। মেসিকে তুলে ২০২২ কোপা জয়ের নায়ক ডি মারিয়াকে নামান। হুলিয়ান আলভারেজের বদলি নামেন লাউতারো মার্তিনেজ।

৮১ মিনিটে আরেক ধাক্কায় ব্রাজিল কোণঠাসা হয়ে পড়ে আরও। রদ্রিগো ডি পলের সঙ্গে বলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার লড়াই চলছিল ওয়েলিংতনের। সেই লড়াইয়ে জিততে না পেরে প্রতিপক্ষকে ধাক্কা মেরে লাল কার্ড দেখেন তিনি। ব্রাজিল পরিণত হয় দশ জনের দলে। সেলেসাও সমর্থকদের অনেককে মাঠ ছাড়তে দেখা যায় তখন। এরপরও যারা গ্যালারিতে ছিলেন আশা নিয়ে তাদের সে আশাও শেষ হয়ে যায় দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে ডগলাস লুইসের নিচু শট প্রথম দফায় আটকানোয় পর দ্বিতীয় চেষ্টায় মার্তিনেজ গ্লাভসে জমালে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিজেদের মাঠে প্রথম হারের বিষাদ সঙ্গী হয় ব্রাজিলের।

বলিভিয়াকে ৩-০ গোলে হারানো উরুগুয়ে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে আছে দ্বিতীয় স্থানে। আর প্যারাগুয়ের মাঠে ১-০ গোলে জয়ী কলম্বিয়া ১২ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিন নম্বরে।