অনুসন্ধানী প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে শতাধিক ইটভাটা। ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহারে অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যেন কাঠ পোড়ানোর মহোৎসবে মেতেছেন ভাটার মালিকরা।
কোনো ধরনের বৈধতা না থাকার পরেও চলছে অনেক ইটভাটা। বৈধ-অবৈধ সব ভাটাতেই নির্বিচারে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। কয়লার দাম বেশি হওয়ায় জ্বালানি হিসেবে কাঠকেই বেছে নিচ্ছেন প্রভাবশালী ইটভাটার মালিকরা। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন ইটভাটার আশপাশে বসবাসকারি কোমলমতি শিশুসহ হাজারো মানুষ।
অধিকাংশ ইটভাটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ইটভাটার মালিকরা গত কয়েক মাস ধরে হাজার হাজার মন কাঠখড়ি সংগ্রহ করে তাদের ইট ভাটার নির্দিষ্ট স্থানে মজুদ করেছে। এখনও কাঠ খড়ি সংগ্রহ অব্যহত রয়েছে। আইনের তোয়াক্কা না করে কাঠখড়ি দিয়ে নির্বিঘ্নে পোড়ানো হচ্ছে ইট।
আর এ ভাবেই চলতে থাকবে ইট পোড়ানোর পুরো মৌসুম। ব্যাঙের ছাতার মতো ইটভাটা গড়ে উঠলেও পরিবেশ অধিদপ্তর নিরব ভূমিকায়।
ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চল, ঘনবসতিপূর্ণ লোকালয়ের তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। এছাড়া কৃষিজমিতে ইটভাটা তৈরির আইনগত বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু আইন ও বিধিমালাকে বৃদ্ধাঙগুলি দেখিয়ে অপরিকল্পিতভাবে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে মির্জাপুরের বিভিন্ন স্থানে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসকের অনুমোদন বা লাইসেন্স না নিয়ে ইটভাটা চালু করা যাবে না। আর এ আইন অমান্য করলে ১০ বছরের কারাদন্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, মির্জাপুর উপজেলায় মোট ১০৫টি ইটভাটা রয়েছে। ১০৫ ইটভাটার মধ্যে ৪৫টির নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। এরাই মূলত বন উজাড়ের পাশাপাশি পরিবেশ নষ্ট করছে। তাই এসব অবৈধ ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর।
পরিবেশ অধিদপ্তর টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক বলেন, মির্জাপুরে ১০৫টি ইটভাটা রয়েছে। যাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের হালনাগাদ ছাড়পত্র নেই সেইসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। তবে বৈধ আর অবৈধ প্রায় সব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করার খবর পেয়েছি। এসব ইটভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম আরিফুল ইসলাম মিডিয়াকে বলেন, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে। শীঘ্রই অবৈধ ইটভাটা চিহ্নিত করে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হবে। ইটভাটায় যারাই জ্বালানি হিসেবে অবৈধভাবে কাঠ ব্যবহার করবে তাদের আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।