নিউজ ডেস্ক, এটিভি সংবাদ :
চট্টগ্রামে গত আড়াই বছরে পানিতে ডুবে শতাধিক নানা বয়সী শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বেঘোরে এরকম শিশু মৃত্যুর খবর এখনো প্রায় প্রতিদিনই আসছে। গত ১১ জুন নগরীর চাক্তাই খালে খেলতে নেমে খালের পানিতে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া অজ্ঞাতপরিচয় আনুমানিক ১০ বছর বয়সী এক পথশিশুর মৃতদেহ গতকাল বুধবার ভোর ৬টায় চাক্তাই খালের পানিতে ভেসে ওঠে।
এদিকে গণমাধ্যম ও নানা সূত্রে তৈরি এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, চলতি মাসের ৩ তারিখ থেকে বিগত দুই মাসে চট্টগ্রামে খাল, পুকুর, জলাশয় ও নালা-নর্দমার পানিতে ডুবে নানা বয়সী ১৬ শিশুর করুণ মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত ১ জুন থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় সপ্তাহে মহানগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে পানিতে ডুবে প্রায় আট শিশুর করুণ মৃত্যুর খবর সংবাদপত্রের পাতায় প্রকাশিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নগরীর আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সহকারী পরিচালক এমডি আবদুল মালেক গনমাধ্যমকে বলেন, চট্টগ্রামে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়া একটি দুঃখজনক খবর। যেসব পরিবারের এসব অবুঝ শিশু পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করছে তারা সবার অগোচরে বেঘোরে মৃত্যুবরণ করছে। কিন্তু এসব একেকটি শিশুর মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতির কারণ। এসব শিশুই এ দেশের ভবিষ্যৎ। কিন্তু তাদের মৃত্যু প্রতিটি পরিবারের জন্যও অবর্ণনীয় বিপর্যয় বয়ে আনে। এর জন্য পরিবার ও সমাজের বড় বা প্রাপ্তবয়স্কদের অবহেলা এবং শিশুদের গতিবিধির ওপর তাদের অমনোযোগিতাকেই দায়ী করা যায় প্রাথমিক বিচারে। দেখা গেছে, পানিতে ডুবে শুধু তিন-চার বছরের অবুঝ শিশুরাই নয়, প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদে দেখতে পাচ্ছি, ১০ থেকে ১৩ বছরের শিশুরাও প্রাণ হারাচ্ছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন পিপলস ভয়েসের প্রেসিডেন্ট শরিফ চৌহান বলেন, নগরীতে খাল-নালা-পুকুর-জলাশয় মিলিয়ে কয়েক হাজার মৃত্যুফাঁদ রয়েছে। প্রতি বছরই বর্ষা এলে প্রবল বৃষ্টিতে এসবে ডুবে গিয়ে শুধু শিশুই নয়, অসতর্ক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষও মৃত্যুবরণ করছেন। অনেকে নিখোঁজও হচ্ছেন।
গত মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় চাক্তাই খালে স্লুইচগেটের কাছে দুটি শিশু খালের পানিতে নিখোঁজ হওয়ার সংবাদে ফায়ার সার্ভিস বিকাল ৪টা থেকে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে কারো সন্ধান পায়নি। লামা বাজার ফায়ার স্টেশনের ফায়ারফাইটার মো. সোলেমান হোসেন গনমাধ্যকে বলেন, বুধবার সকালে একটি শিশুর লাশ ভেসে উঠলে ফায়ার সার্ভিস সেটি উদ্ধার করে বাকলিয়া থানায় হস্তান্তর করে। বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফতাব গনমাধ্যমকে বলেন, শিশুটির মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুসংক্রান্ত প্রাপ্ত তথ্যের কয়েকটিতে দেখা যায়, গত ৯ জুন বন্দরে খেলতে গিয়ে খোলা ম্যানহোলে পড়ে গিয়ে খালের পানিতে ভেসে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে সাইদুল ইসলাম নামে প্রথম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। গত ৬ জুন কক্সবাজারের রামুতে এক জেলের জালে দুই ভাইবোনের মৃতদেহ উঠে আসে। গত ৩ জুন বিকালে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে মাছ ধরতে নেমে মো. তামজিদ হোসেন নামে ১১ বছরের এক শিশু পুকুরে ডুবে মারা যায়। গত ১ জুন শনিবার কক্সবাজারের মহেশখালীতে পুকুরে ডুবে মারা যায় মুন্নি (৪) ও মনিরা (৩) নামের দুই অবোধ শিশু। একই দিন মহেশখালীতে পুকুরে ডুবে মারা যায় রফিকুল ইসলাম (১৩) নামের চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্র। গত ২৪ মে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় পুকুরে ডুবে ইমন নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। গত ৪ জুন আনোয়ারায় পুকুরে ডুবে মৃত্যু হয় এক শিশুকন্যার। গত ২২ এপ্রিল চট্টগ্রামের চন্দনাইশে পুকুরে ডুবে মৃত্যুবরণ করে দুই শিশুকন্যা ইত্যাদি।
Copyright © 2023 Atv Sangbad (A Concern of Aparadh Anusondhan Ltd) All rights reserved