ভোলা প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ
ভোলার দৌলতখানে মেঘনায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জলদস্যুরা। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো নৌকা বা মাছ ধরার ট্রলার ডাকাতির শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে জেলেরা। ভরা মৌসুমেও ইলিশসহ অন্যান্য মাছের আকাল থাকলেও থেমে নেই জলদস্যুদের তৎপরতা।
বেঁধে দেয়া পনের টাকা জিম্মি হওয়া জেলেদের স্বজনরা জলদস্যুদের দেয়া বিকাশ নাম্বারে না দেয়া পর্যন্ত জাল নৌকা ও জেলেদের মুক্তি মেলে না। টাকা না পাওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে জিম্মি করা জেলেদের ওপর নির্মম নির্যাতন।
বাধ্য হয়েই ধার দেনা করে জলদস্যুদেরকে টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনা হয়। আর প্রাণভয়ে এসব নীরবে হজম করে যান জেলেরা। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা সংস্থাকে জানাতে ভয় পান। এ তো গেল রাতের মেঘনার চিত্র।
দিনের বেলা মাছ ধরতে গিয়ে শার্টের ওপরে নৌপুলিশের জ্যাকেট পরা একটি চক্রের চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলেরা। জেলেদের অভিযোগ নানান ছুতায় নৌকাসহ জেলেদেরকে আটক করে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে তারাও জলদস্যুদের কৌশলই অবলম্বন করে থাকেন।
সোম ও মঙ্গলবার দু’দিন উপজেলার মেঘনা সংলগ্ন জেলে অধ্যুষিত ঘোষের হাট, মাঝির হাট, সাতবাড়িয়া ও এসহাক মোড় এলাকায় সরেজমিন ঘুরে জেলেদের দেয়া বক্তব্যে এসব তথ্য জানা যায়। এ সময় তাদের চোখে মুখে ভীতির ছাপ ছিল স্পষ্ট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব জেলেরা জানান, গত এক সপ্তাহে দৌলতখানের জেলেদের ১৫টি নৌকা জলদস্যুদের ডাকাতির শিকার হয়েছে। গত ২৩ জুন গভীর রাতে উপজেলার এসহাক মোড় এলাকার শাহাবুদ্দিন মাঝির নৌকা, ২৫ জুন রাতে একই এলাকার ইদ্রিছ মাঝির নৌকায় হানা দিয়ে জলদস্যুরা জেলেদেরকে বেধড়ক পিটিয়ে জাল, মাছ, সোলার প্যানেল, জেলেদের মোবাইল ফোনসহ সব সরঞ্জাম নিয়ে যায়।
ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটে ২৬ জুন রাতে। ওই এক রাতেই মেঘনায় দৌলতখানের এসহাক মোড় এলাকা থেকে বোরহান উদ্দিনের হাকিমুদ্দিন, তজুমদ্দিন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ছয়টি মাছ ধরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে বলে জেলেরা জানান। এদের মধ্যে জসিম মাঝি ও কামাল মাঝির দুটি নৌকা এক লাখ টাকা ডাকাতদের দিয়ে জিম্মি করা নৌকা ও জেলেদেরকে ছাড়িয়ে আনা হয়।
২৪ জুন রাতে দৌলতখানের পাতার খাল ঘাট থেকে মোল্লা মাঝির ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি নিখোঁজের পর আর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এ সব ঘটনা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা সংস্থাকে জানানো হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে জেলেরা বলেন, তাহলে আমরা জীবন নিয়েই নদী থেকে ফিরতে পারবো না।
এ ব্যাপারে নৌপুলিশের হাকিমুদ্দিন ক্যাম্পের ইনচার্জ রুহুল আমিন বলেন, মেঘনায় দিনরাত নৌপুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা শুনেছি একটি চক্র নৌপুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা সংস্থার নাম করে জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে।