প্রিন্ট এর তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪, ৩:২২ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ১, ২০২৪, ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ
রমরমা বাণিজ্য চার এমপির:মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার!
নিউজ ডেস্ক, এটিভি সংবাদ :
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের নিয়ন্ত্রণে জনপ্রতিনিধিসহ গুটিকয়েক প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। বছরের পর বছর সংসদ সদস্যসহ প্রভাবশালীরা প্রতারণা করলেও জড়িতরা থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
সবশেষ তাদের প্রতারণার শিকার ৩০ হাজার কর্মী। যাদের স্বপ্নের সঙ্গে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া হলো দেড় হাজার কোটি টাকা। শুক্রবার (৩১ মে) ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও টিকিট পাননি হাজারো যাত্রী।
জানা গেছে, রাজশাহীর বাগমারার আবু বক্কর জীবনের সবটুকু সঞ্চয় ৬ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিলেন ফুয়াং ট্রাভেলস এজেন্সির হাতে। কথা ছিল ৩১ মে মালয়েশিয়ায় যাবে ছেলে তোফায়েল। তবে ইমিগ্রেশনে প্রবেশ করতেই জানা গেল, এজেন্সির দেয়া টিকিট ভুয়া। বারবার ফোন করলেও জবাব নেই রিক্রটিং এজেন্সির। বাকরুদ্ধ আবু বকরের কষ্ট ঝরে পড়ে কান্না হয়ে।
জমি, মায়ের গয়না বিক্রি করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখেছিলেন ময়মনসিংহের গৌরিপুরের আনোয়ার। তবে ভুয়া টিকিটের চক্রে তিনিসহ আরও ১৭ জনের স্বপ্ন পরিণত হয় দুঃস্বপ্নে।
তাদের ও স্বজনদের কান্নায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আকাশ ভারী হলেও টনক নড়েনি মন্ত্রণালয়, বিএমইটি, বায়রাসহ সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থারই।বিদেশে থাকা প্রবাসী প্রতিমন্ত্রী দেশে ফিরেই পাড়ি জমান সিলেটে। তার কাছে মূল্য পায়নি বিমানবন্দরে ভুক্তভোগী প্রায় ৩০ হাজার কর্মীর আর্তনাদ। গণমাধ্যমে হাজারো কর্মীর ভোগান্তির কথা ফুটে উঠলেও বায়রা, বিএমইটি, বিমান কিংবা সংশ্লিষ্ট সবগুলো সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। অথচ মালয়েশিয়া সরকারের কোটা অনুযায়ী ৫ লাখ কর্মীর কাছ থেকে গড়ে ৫ লাখ টাকা করে আদায় করে তারা।
বছরের পর বছর নিউ হ্যাভেন, এলিগেন্ট, আল ফারাহসহ হরেক নামের এজেন্সির প্রতারণা অব্যাহত থাকলেও অদৃশ্য কারণে হয়নি প্রতিকার। পর্দার আড়ালে কুশীলবদের মাঝে আছেন সংসদ সদস্যসহ প্রভাবশালীরা। যাদের হাতের ইশারায় ভাগ্য বদলায় শ্রমবাজারের, সেখানকার কর্মীদের। অনুমোদন পেয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করেও শুক্রবার শেষ দিনে প্রায় ৩০ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। এতে গড়ে ৫ লাখ টাকা করে হলেও এজেন্সিগুলোর পকেটে গেছে দেড় হাজার কোটি টাকা।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে মূলত রমরমা ব্যবসা করছেন বর্তমান ও সাবেক চার সংসদ সদস্য। তাদের মধ্যে অন্যতম মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) টিকিটে ফেনী-৩ আসনের সংসদ সদস্য হন তিনি। ফাইভএম ইন্টারন্যাশনাল নামের এজেন্সির মাধ্যমে তিনি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠিয়ে থাকেন।
এই তালিকায় নাম আছে ফেনী-২ (সদর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) নিজাম উদ্দিন হাজারীর। তিন বার সংসদে যাওয়া এই জনপ্রতিনিধি স্নিগ্ধা ওভারসিজ নামের এজেন্সি পরিচালনা করেন।
ঢাকা-২০ (ধামরাই) আসনের সংসদ সংসদ্য বেনজীর আহমেদ পরিচালনা করেন আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল নামের এজেন্সি। আর সাবেক অর্থমন্ত্রী ও কুমিল্লা-১০ আসনের সংসদ সদস্য আহম মুস্তফা কামালের স্ত্রীর নামে চলে অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ নামের এজেন্সি।দুর্নীতি অনিয়ম, সিন্ডিকেটের কারণে এ পর্যন্ত চার বার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য শ্রমবাজার বন্ধ করতে বাধ্য হয় মালয়েশিয়া সরকার। বাংলাদেশি সিন্ডিকেটের কাছে নিজেদের অসহায়ত্বের কথাও তুলে ধরেছিলেন ঢাকায় মালয়েশীয় হাইকমিশনার হাযনাহ মো. হাশিম।
১ জুন থেকে মালয়েশিয়া সরকারের পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত দেশটিতে বন্ধ থাকবে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ।
গত ১৯ এপ্রিল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কথা তুলে ধরে বিবৃতি দিয়েছিল জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ও। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল সব জানলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
Copyright © 2023 Atv Sangbad (A Concern of Aparadh Anusondhan Ltd) All rights reserved