সৈকত মনি, এটিভি সংবাদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এখন ত্রাণের নগরী। বৃহস্পতিবার সারাদেশে বন্যার্তদের জন্য গণত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শনিবার তৃতীয় দিনেও টিএসসিতে চলছে ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম। সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণে টিএসসির ত্রাণ কার্যক্রম গত দুই দিনে বেশ সাড়া ফেলেছে।
শুক্রবার কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই উদ্যোগে নগদ এবং মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেলে ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা ৫০ হাজার ১৯৬ টাকা জমা পড়েছে। এর মধ্যে নগদ অর্থ সংগ্রহ হয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ ২৩ হাজার ১৭৩ টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, টিএসসিতে এখন ত্রাণ ছাড়া অন্য কোনো কার্যক্রম নেই। ত্রাণ নিয়ে আসা গাড়িগুলো সারি সারি করে টিএসসিতে ঢুকছে। রোভার স্কাউটের সদস্যরা শৃঙ্খলা রক্ষার কাজটি করছে। মাইকে বারবার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে, গাড়িগুলো সারিবদ্ধভাবে যাবে, সবাই ফুটপাত দিয়ে হাঁটুন।
টিএসসির প্রধান গেটে কয়েকটি টেবিল বসিয়ে অস্থায়ী বুথ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ১০ জনের অধিক স্বেচ্ছাসেবক ব্যস্ত হাতে ত্রাণগুলোর তালিকা এবং প্রতিষ্ঠানের নাম লিপিবদ্ধ করছেন। অর্থ সহায়তাও করছেন অনেকে। সেখানে স্বেচ্ছাসেবকদের ব্যস্ত আনাগোনা, দাঁড়ানোর জায়গা নেই বলা চলে।
ত্রাণ বুথে লিপিবদ্ধ হওয়ার পর সেটি স্বেচ্ছাসেবকদের হাত ঘুরে টিএসসির ভেতরে যাচ্ছে। সেখানে প্যাকেজিং চলছে। টিএসসি ক্যাফেটেরিয়া ভরে ত্রাণগুলো রাখা হচ্ছে টিএসসির বারান্দায়। এদিকে কলাভবন ক্যাফেটেরিয়াও (ডাকসু ক্যান্টিন) প্যাকেজিং চলছে। মূলত এখান থেকে ত্রাণগুলো বড় ট্রাকে করে রাতে বন্যার্ত এলাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এখানে তুলনামূলক ভিড় কম দেখা যাচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক মোহাম্মদ মহিউদ্দীন বলেন, তৃতীয় দিনের মতো ত্রাণ সংগ্রহ চলছে। আমরা সন্ধ্যায় এবং রাতে আপডেট জানাব কী পরিমাণ ত্রাণ এলো। তারপর বড় ট্রাকে এগুলো বন্যার্ত এলাকায় চলে যাবে।
এর আগে ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচির প্রথম দিনে বৃহস্পতিবার ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৩ টাকা জমা হয়। এ ছাড়া প্যাকেজিং শেষে রাতে পণ্যভর্তি কয়েকটি ট্রাক দুর্গত এলাকায় পাঠানো হয়৷
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেছেন, প্রায় ৪০০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। জমা দেওয়া ত্রাণের মধ্যে নগদ অর্থ, শুকনো খাবার ছাড়াও আছে স্যালাইন, স্যানিটারি প্যাড, জরুরি ওষুধ, মোম, দিয়াশলাই, গুড়, নানা রকম পোশাক এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট।
এদিন সায়মা খাতুন নিউমার্কেট এলাকা থেকে এসেছেন চার বছরের বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে। বুথে অর্থ সহায়তা দেওয়ার পর তিনি বললেন, ‘আসলে ৫ আগস্টের পর দেশটা নিজের বলে মনে হয়। এখানে ত্রাণ সংগ্রহের কথা শুনেছি বেশ। তাই নিজে চলে এলাম আজ। সকালে ভিড় কম থাকে। বিকেল হলে তো মানুষ বাড়ে। বন্যায় তো আমি পড়তে পারি, তাই আমার কর্তব্য সামর্থ্য অনুযায়ী দুর্গতদের পাশে থাকা।
হাতিরঝিল থেকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে এসেছেন তাইফ হোসেন। দেখে এগিয়ে এসে বললেন, তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে চান। সমন্বয়কদের সঙ্গে কথা বলে দেওয়া যাবে কিনা। কথা বলার পর তিনি লেগে গেলেন প্যাকেজিংয়ের কাজে।
Copyright © 2023 Atv Sangbad (A Concern of Aparadh Anusondhan Ltd) All rights reserved