আল্লাহর দুনিয়ায় বিচার হবেই এ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বোনের করা মামলার দীর্ঘ দশ বছর পর তুরাগের রাজাবাড়ি কবর স্থান থেকে হিজড়া সম্প্রদায়ের একজনের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। সত্যিকারের বিচার হবে এমনটি আশা করছেন এখন নিহতের স্বজনের।
জামালপুরের জেলা জজ আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সহকারী কমিশনার ভূমি) কাউছার হামিদের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১:২০ মিনিটে লাশটি উত্তোলনের জন্য মাটি খোঁড়ার কাজ শুরু হয়।
এ সময় তুরাগ থানার এসআই আবুল খায়েরের নেতৃত্বে একটি টহল টীম এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি, জামালপুর) থেকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মহির উদ্দিন খান উপস্থিত ছিলেন।
গত ৩০ মে নিহতের বোন শাহনাজ বেগম জামালপুর জেলা জজ আদালতে তৃতীয় লিঙ্গের মীর হারুন ওরফে পিংকিকে খুন করা হয়েছে মর্মে একটি জি.আর.মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিষয়টি আমলে নিয়ে জেলা জজ আদালত, অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) লাশ উত্তলনসহ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার নির্দেশ প্রদান করেন (মামলা নম্বর -১২৬(০২)২০২২)।
উল্লেখিত মামলার সূত্র থেকে জানা যায়, প্রায় দশ বছর আগে (৮ মার্চ ২০১২) জামালপুর জেলার ইসলামপুরের বটচরে হিজড়া সম্প্রদায়ের একটি ঘরোয়া আলোচনায় ৮/১০ জনের অতর্কিত হামলায় গুরুতর আহত হন মীর হারুন ওরফে পিংকি।
মীর হারুন ওরফে পিংকির মৃত্যু নিশ্চিত করতে মামলার আসামীরা, আপন ওরফে সোহেল (৩২), ঝুমা ওরফে সবুজ (৪৮), আব্বাস উদ্দিন আশিক (৩২), সজীব ওরফে সোনালী (৩৫), রিফাত ওরফে শ্যাম (৩০), মিন্টু ওরফে সালমা (৩৫), সোহাগ ওরফে সোনালী (৩৫), শান্তা (৩৫) জোরপূর্বক বিষপান করিয়ে হত্যা করে পিংকিকে।
উল্লেখিত মামলার ১ নং সাক্ষী ইব্রাহিম ওরফে কচি হিজড়া জানান, মগবাজার এলাকার গুরু হায়দার হিজড়ার গ্রামের বাড়িতে আসামিরা আমাদের উপর অতর্কিত হামলা করেন। এ সময় আমিসহ বাকিরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে ঢাকা চলে আসি। তিনি দাবি করেন, ঐ দিনের হামলায় সবাই প্রাণে বাঁচলেও হারুনকে গুরুতর অবস্থায় আপন ও আব্বাস উদ্দিন আশিক আটকে রাখেন।
সাক্ষী খায়রুল ওরফে স্বপ্না জানান, পিংকিকে জামালপুর হত্যা করা হলেও পরের দিন ঢাকার তুরাগ এলাকায় লাশ ফেলে যান আসামিরা।
পরিবারের অনুপস্থিতিতে ঐ দিনই দ্রুত তুরাগের রাজাবাড়ি কবর স্থানে লাশ দাফন করা হয়।
মামলাটির তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মহির উদ্দিন খান জানান , আদালতের নির্দেশনায় মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১:২০ মিনিটে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তৃতীয় লিঙ্গের ওই ব্যক্তির মরদেহ উত্তোলনের কাজ শুরু হয়। এরপর মরদেহের ডিএনএ সংগ্রহ করে সিআইডি ল্যাবে পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
মামলাটি আমলে নিয়ে জামালপুর জেলা জজ আদালত যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তার ভূয়সী প্রশংসা করেন স্থানীয় জনসাধারণ।