নিউজ ডেস্ক, এটিভি সংবাদ
এক দশক পর ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রকাশ্যে আসা জামায়াতে ইসলামী এখন রাজনীতিতে পুরোদমে সক্রিয়। টানা ১০ বছর পর গত ১০ জুন রাজধানীতে প্রথমবারের মতো পুলিশের অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত। এরপর সুইডেনে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার রাজধানীসহ প্রায় সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন হারানো দলটির নেতাকর্মীরা। এবার ঢাকার বাইরে বড় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। চলতি জুলাইয়ে রাজধানীর বাইরে পাঁচটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশের পর কয়েকটি জেলা ও বিভাগে সমাবেশ করে ঢাকায় বড় শোডাউনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘সুইডেনে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে দেশের প্রতিটি জেলায়, কোথাও কোথাও উপজেলায়ও জামায়াতের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা মিছিল-সমাবেশ করেছেন। কোনো কোনো স্থানে গ্রাম পর্যায়েও মিছিল হয়েছে।’
সুইডেনে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীর মিরপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াত। মিছিলে দলটির কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। মিছিলটিতে পুলিশকে বাধা দিতে দেখা যায়নি। জানা গেছে, গতকালের বিক্ষোভের অনুমতি চেয়ে ৪ জুলাই পুলিশের মহাপরিদর্শককে ইমেইল করে জামায়াত। কিন্তু, পুলিশ অনুমতি দিয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মিছিলপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম। মিরপুর-১ গোলচত্বরে আয়োজিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য গোলাম মোস্তফা, উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, কর্মপরিষদ মু. আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ। সমাবেশের পর তাদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল টেকনিক্যাল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
যুদ্ধাপরাধের বিচারে এক যুগ ধরে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে আদালতের রায়ে নিবন্ধন হারানো জামায়াত। সারাদেশে দলটির সব কার্যালয় বন্ধ। গত ১০ বছর জামায়াতের তৎপরতা ঝটিকা মিছিলে সীমাবদ্ধ ছিল। গত বছরের ডিসেম্বরে মিছিল করার অনুমতি চেয়েও পায়নি। গত ৩০ ডিসেম্বর বিনা অনুমতিতে মিছিল বের করলে পুলিশ তা লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরের চার মাসে তিন বার মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করলেও অনুমতি না পাওয়ায় করতে পারেনি জামায়াত। কিন্তু ২৪ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা-নীতি ঘোষণার পর পরিস্থিতি বদল হতে শুরু হয়। মাসখানেক আগেও জামায়াত ঝটিকা মিছিল করলে পুলিশের তৎপরতা দেখা যেত। মিছিলকারীদের আটক এবং বিনা অনুমতিতে মিছিল করায় পুলিশ মামলা করত। তবে, গতকাল মিছিল চলাকালে এবং পরবর্তী সময়ে পুলিশকে আগের ভূমিকায় দেখা যায়নি।
এদিকে, প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে আসা জামায়াত চলতি জুলাইয়ে রাজধানী ছাড়া পাঁচটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটির অংশ হিসেবে আগামী ১৫ জুলাই সিলেটের রেজিস্টারি মাঠে প্রথম সমাবেশ করার তারিখ নির্ধারণ করেছে। বুধবার সিলেট মহানগর জামায়াত সমাবেশের অনুমতি চেয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন করেছে। সিলেটের পর চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায়, এরপর রাজশাহী ও খুলনায় সমাবেশ করার লক্ষ্যে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত। দলটির সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় শহরে এসব সমাবেশের পর আগস্টে কয়েকটি জেলা ও বিভাগে সমাবেশ করার লক্ষ্য রয়েছে। এসব সমাবেশ নির্বিঘ্নে করতে পারলে সেপ্টেম্বরে রাজধানীতে বড় সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।
জানা গেছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠের রাজনীতিতে পুরোপুরি সক্রিয় থাকার লক্ষ্যে ধারাবাহিক কর্মসূচি নিচ্ছে জামায়াত। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন ও কারাবন্দি দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি আপাতত এককভাবে নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘ঢাকায় সমাবেশের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে, এর দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আপাতত এককভাবেই দলীয় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার চেষ্টা করছি। গত ১০ জুন ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে যে ১০ দফা আমরা দিয়েছি, সেগুলোর মূলত তিনটিকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা সামনে আন্দোলন জোরদার করব। সেগুলো হলো—কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন ও জামায়াতের কারাবন্দি নেতাকর্মীসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি দাবি এবং নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিসহ জনগণের ভোগান্তির প্রতিবাদ।’
জামায়াত কি এককভাবেই আন্দোলন করবে, নাকি বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. তাহের বলেন, ‘আপাতত আমরা এককভাবে দলীয় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সময় ও পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ জামায়াতের তো নিবন্ধন নেই, তাহলে আপানারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কীভাবে নির্বাচন করবেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল দাবিই হচ্ছে কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল। আমরা মনে করি, কেয়ারটেকার সরকার এলে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে। তখন দেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের অন্যতম হিসেবে জামায়াত ন্যায্যতার ভিত্তিতে নিবন্ধন ফিরে পাবে বলে আমরা আশাবাদী। নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার পর তখনকার পরিস্থিতিতে জামায়াত নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে, এককভাবে নাকি জোটগত নির্বাচনে অংশ নেব—সেই সিদ্ধান্ত তখন হবে।’