আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এটিভি সংবাদ
ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের নেতৃত্বাধীন বেসরকারি সামরিক সংস্থা ওয়াগনার রাশিয়ায় একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা চালিয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শুরু হয়ে মস্কো অভিমুখে সামরিক পদযাত্রা চলে শনিবার পর্যন্ত। গ্রুপের সশস্ত্র সেনারা রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে একটি সেনা সদর দপ্তর দখল করতে সক্ষম হয় বিনা বাধায়। এমনকি মস্কো অভিমুখে যাত্রাপথে সর্বশেষ অবস্থান পর্যন্ত তাদের কোথাও বাধা দেওয়া হয়নি।
রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির প্রতিবেদন বলছে, ওয়াগনার সেনারা অন্যান্য সামরিক ইউনিটগুকে একত্রিত করতে ব্যর্থ হয়। এরপর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর পরে শেষ পর্যন্ত মস্কোর দিকে তাদের অগ্রগতি বাতিল করে।
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় সংস্থার প্রধান প্রিগোজিনের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তির অধীনে প্রিগোজিন ও তার সৈন্যরা বিদ্রোহের ঘোষণার পরও বিচারের আওতায় পড়বে না।
ওয়াগনার-এমওডি (রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়) উত্তেজনা:
বেসরকারি সামরিক সংস্থা ওয়াগনার গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছেন শক্তিশালী ও বিত্তবান রেস্টুরেন্ট-ক্যাটারিং ব্যবসায়ী ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। এই গ্রুপের সদস্যরা নিয়মিত রাশিয়ান সৈন্যদের পাশাপাশি রুশ স্বার্থে লড়াই করে। আর্টিওমভস্কের ডনবাস শহরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে তারা নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছে ভালোভাবেই।
প্রিগোজিন রাশিয়ার শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একজন সোচ্চার সমালোচক। তিনি প্রকাশ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং চিফ অব জেনারেল স্টাফ জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভের বিরুদ্ধে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান পরিচালনার নানা ব্যর্থতার অভিযোগ করেছেন। প্রিগোজিন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
প্রিগোজিনের মস্কোতে সামরিক পদযাত্রা:
স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৩ জুন) রাতে ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন তার লোকদের ওপর রুশ সৈন্যদের মিসাইল হামলার অভিযোগ তোলেন। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ফিল্ড ক্যাম্পে এই হামলা চালানোর অভিযোগ তোলা হয়।
তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দ্রুত প্রিগোজিনের দাবিকে ‘তথ্যমূলক উস্কানি’ হিসাবে প্রত্যাখ্যান করে। তবুও প্রিগোজিন ঘোষণা করেছিলেন, তার বাহিনী মস্কোতে পৌঁছানোর পরিকল্পনা নিয়ে ‘ন্যায়বিচারের জন্য পদযাত্রা’ শুরু করছে। তারা রুশ সামরিক বাহিনীর কিছু ‘দুষ্টু কর্মকর্তাদের’ সরিয়ে দিতে চান।
শনিবার ভোরে ওয়াগনারের ট্যাংকসহ সাঁজোয়া যুদ্ধযান ও গাড়িবহর দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রোস্তোভ-অন-ডনের দিকে ঢুকতে শুরু করে। শহরে ওয়াগনার সদস্যরা কোনও লড়াই কিংবা বাধা ছাড়াই দক্ষিণ সামরিক জেলার সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নেন। পরে রোস্তোভে বেশ কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা গেলেও হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি।
বিদ্রোহের নিন্দা পুতিনের
পদযাত্রা ঘোষণা করার অল্প সময়ের মধ্যেই রুশ ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস ওয়াগনার প্রধানকে ‘সশস্ত্র বিদ্রোহে উস্কানি’ দেওয়ার অভিযোগ করে। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা কার্যক্রম শুরু হয়।
এরপর শনিবার (২৪ জুন) সকালে এক ভিডিওবার্তায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ওয়াগনারের কার্যক্রমকে ‘দেশ ও জনগণের পিঠে ছুরিকাঘাত’ বলে আখ্যায়িত করে। ওয়াগনার এই পদক্ষেপ রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সেইসঙ্গে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে পুতিন বলেন, শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, মস্কো এবং এর আশেপাশের অঞ্চলে সন্ত্রাসবিরোধী নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। বেশ কয়েকটি শহরে সমস্ত পাবলিক ইভেন্ট বাতিল করা হয়। মস্কোর দিকে যাওয়ার প্রধান মহাসড়কগুলোতে বন্ধ করে দেওয়া হয় যান চলাচল।
একই সময়ে প্রিগোজিনের অন্যান্য সামরিক ইউনিট থেকে সমর্থন পেতে ব্যর্থ হন। বিপরীতে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এবং কর্মকর্তা ওয়াগনারকে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানান।
সমঝোতার পর ফিরে গেছে ‘বিদ্রোহী ইউনিট’
শনিবার সন্ধ্যায় বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো পুতিনের পক্ষ থেকে প্রিগোজিনের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তিনি জানান, ওয়াগনার প্রধান নিরাপত্তা গ্যারান্টির বিনিময়ে বিদ্রোহের প্রচেষ্টা বন্ধ করতে সম্মত হয়েছেন।
এর কয়েক ঘণ্টা পরে প্রিগোজিন বলেন, ওয়াগনার সেনারা মস্কোর দিকে তাদের অগ্রযাত্রা থামিয়ে ঘাঁটিতে ফিরে যাচ্ছে। কিছু সময় পরে আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে, ওয়াগনার যোদ্ধারা রোস্তোভ-অন-ডন ছেড়ে চলে গেছে।
ক্রেমলিন বলেছে, রক্তপাত এড়ানোর জন্য প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করা হবে এবং তিনি বেলারুশে চলে যাবেন।
পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ইউক্রেনে ফ্রন্টলাইনে ওয়াগনার সেনাদের সাহসী অর্জনের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া বা বিচার করা হবে না।