আহসান হাবীব, এটিভি সংবাদ
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে আজ (শুক্রবার) ঢাকায় মহাসমাবেশ করছে বিএনপি। একই দিন যৌথভাবে সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। অনেকেই জরুরি প্রয়োজনে বের হয়ে পড়েছেন বিপাকে। তারা বলছেন, রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করা কোনো রাজনৈতিক দলের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড হতে পারে না। বড় দুদলের সমাবেশকে ঘিরে পরিবহণ মালিক-শ্রমিক ও যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ কারণে রাজধানীতে গণপরিবহণের সংখ্যাও কমে গেছে।
সামিউল জীবন চাকরি করেন একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানে। তার সন্তান আবির ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা মেডিকেলে ভর্তি। সামিউলের বাসা শাহজাদপুর হওয়ায় দুপুরের খাবার আনতে বাসায় এসে মুগদা যেতে গিয়ে আটকা পড়েছেন সমাবেশের কারণে।
সামিউল সময় সংবাদকে বলেন, ‘এটা কোনো কথা হতে পারে না। বাস তো চলছেই না, এর মধ্যে সিএনজি, বাইক কেউই ওদিকে যেতে চাচ্ছে না। সবার মধ্যে একধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। মানুষকে বিপাকে ফেলে গণতন্ত্রের নামে এসব ভোগান্তির সমাবেশের কোনো মানে হয় না। এসব সমাবেশ পূর্বাচল বা ঢাকার প্রাণকেন্দ্র থেকে দূরে করা উচিত। যারা সমাবেশে যাওয়ার তারা এমনিই যাবে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি না করে মুক্তি দেয়া উচিত।’
রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল চালক আফতাব বলেন, ‘সমাবেশে গ্যাঞ্জাম হলে শুরুতেই হয় বাস ভাঙে, নাহলে বাইক পুড়িয়ে দেয়। তাই ওদিকে যেতে চাচ্ছি না। সমাবেশের কারণে ও ছুটির দিন থাকায় মানুষ কম বের হলেও, যারা বের হচ্ছেন তারা অনেকে মতিঝিল, মালিবাগ বা টিকাটুলির দিকে যাওয়ার অনুরোধ করছেন। কিন্তু কীভাবে যাব বলেন। মালিবাগ মোড়, আরামবাগ, মতিঝিল, নয়াপল্টন, সেগুনবাগিচা, মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব, বায়তুল মোকাররম সবদিকের রাস্তা বন্ধ।’
একই দিনে একাধিক দলের সমাবেশ আয়োজন কতটা যুক্তিযুক্ত–জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘একই দিনে একাধিক দলের সমাবেশ সমস্যার সৃষ্টি করে। তবে এটি পরিকল্পিত ছিল বলে মনে হয় না। এখানে সমন্বয়ের প্রয়োজন ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর। ছুটির দিন হওয়ায় হয়তো মানুষ কম বের হচ্ছে। কিন্তু জরুরি প্রয়োজনে যারা বের হচ্ছেন, তারা পড়ছেন ভোগান্তিতে।’
জনভোগান্তি সৃষ্টি করে জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা আদৌ যৌক্তিক কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন: ‘প্রথমত, রাজধানীতে উন্মুক্ত মঞ্চের অভাব। মাঠের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। আইনেই আছে রাস্তা বন্ধ করে গণসমাবেশ করা যাবে না। কিন্তু কার্যত আইন বাস্তবায়ন হচ্ছে না।’
বিএনপিকে গোলাপবাগ ও আওয়ামী লীগকে আগারগাঁও পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে সমাবেশের অনুমতি দেয়ার পরও রাজধানীর মূলকেন্দ্রে দুই কিলোমিটারের মধ্যে দুদলের সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এর আগেও বিএনপিকে উন্মুক্ত মঞ্চে সমাবেশের প্রস্তাব দিলে তারা মানেনি। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠান থাকায় তার পাশের মাঠে নিরাপত্তার স্বার্থে সমাবেশ করেনি আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনগুলো। এ ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত রাস্তা দখল না করে উন্মুক্ত স্থানে সমাবেশ করা। তবে সমাবেশ যেখানেই করা হোক না কেন, রাজধানীতে সমাবেশ হলে জনভোগান্তি সৃষ্টি হবে উল্লেখ করে আরেফিন বলেন, সমাবেশ উন্মুক্ত মাঠে হলেও কর্মীদের পদচারণায় আশপাশের রাস্তায় জটলা সৃষ্টি হবে। তবে যেহেতু সভা-সমাবেশ করা রাজনৈতিক দলগুলোর সাংবিধানিক অধিকার, তাই গণতন্ত্রমনা জনগণ এটুকু কষ্ট মেনে নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এটিভি/এস