অনলাইন ডেস্ক, এটিভি সংবাদ
বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে শপথ গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার সামনে সম্মিলিত কণ্ঠে এ শপথ পাঠ করেন শিক্ষার্থীরা।
শপথে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা প্রতিজ্ঞা করছি যে আজ এই মুহূর্ত থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার কল্যাণ ও নিরাপত্তার নিমিত্তে, আমার ওপর অর্পিত ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক, নৈতিক ও মানবিক সকল প্রকার দায়িত্ব সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় আমার জ্ঞাতসারে হওয়া প্রতিটি অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমি সর্বদা সোচ্চার থাকব।
‘আমরা প্রতিজ্ঞা করছি যে এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সকল প্রকার সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্খাতকে আমরা সম্মিলিতভাবে রুখে দেব। নৈতিকতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সব ধরনের বৈষম্যমূলক অপসংস্কৃতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার আমরা সমূলে উত্খাত করব।’
এই আঙিনায় যেন আর কোনো নিষ্পাপ প্রাণ ঝরে না যায়, আর কোনো নিরপরাধ যেন অত্যাচারের শিকার না হয় তা আমরা সবাই মিলে নিশ্চিত করব।’
এর আগে সকালে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থী আশিকুল ইসলামের (বিটু) দ্রুততম সময়ে কোর্স রেজিস্ট্রেশন বাতিলসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বাতিল করতে বুয়েটে শিক্ষার্থীদের গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়।
শপথ গ্রহণ শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলেন, ‘লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির চরমতম রূপ বারবার আঘাত হেনেছে আমাদের বুয়েট ক্যাম্পাসে। ২০০২ সাল থেকে শুরু করে ২০১৯ সাল ছাত্ররাজনীতির অন্ধকার অধ্যায় তার ভয়ংকর দাগ রেখে গেছে আমাদের এই ক্যাম্পাসে। কালের পরিক্রমায় নিজেরা আন্দোলন করে দাবি আদায় নিশ্চিত করে সব বাধা ডিঙিয়ে সব শিক্ষার্থী একতাবদ্ধ হয়ে যখন সুস্থ সুন্দর একটি পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিত করেছে, তখনই আবারও বুয়েট শিক্ষার্থীদের নিরপেক্ষ মনোভাবকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল।
শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ৩০ জুলাই সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে নাশকতার পরিকল্পনাকারী সন্দেহে বুয়েটের ২৪ জন বর্তমান শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জন শিক্ষার্থী আটক হয়। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদের জামিন মঞ্জুর হয়। এ বিষয়ে আমরা রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার ওপর আস্থা রেখে একটি সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার আশা করছি। যদি তারা প্রত্যেকেই দোষী প্রমাণিত হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবশ্যই তাদের বিপক্ষে থাকবে। একইভাবে যদি তাদের মধ্যে কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হয়, তবে নির্দোষরা যেন আর কোনোভাবে কোনো হয়রানির শিকার না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট থাকব এবং বুয়েট প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করব।
এ সময় আটক হওয়া ওই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে কোনো সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত কি না বা তাঁরা ক্যাম্পাসে অন্য শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করছেন কি না, এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শাস্তির দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। যদি তাঁরা নির্দোষ হন, তাহলে তাঁরা যেন সুষ্ঠুভাবে একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেন তার দাবি জানানো হয়।
বুয়েট ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মৌলবাদচর্চা হবে না জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘সব ধরনের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে বুয়েট শিক্ষার্থীদের যে দৃঢ় অবস্থান তা থেকে আমরা কোনো অবস্থাতেই সরে আসব না। যেকোনো ছাত্ররাজনীতি এবং মৌলবাদচর্চা বুয়েট ক্যাম্পাসে কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না, তা সে যে দলেরই হোক না কেন।’
এটিভি/এস