atv sangbad

Blog Post

শিশুকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের পর হত্যা, অবশেষে গ্রেফতার ৩

বাসাইল (টাঙ্গাইল) থেকে ছানোয়ার হোসেন, এটিভি সংবাদ

টাঙ্গাইলের বাসাইলে তৃষা মণি (৯) নামের এক শিশু শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় তিন যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সোমবার (৬ জুন) দুপুরে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সিরাজ আমিন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানান।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের স্বপন মন্ডলের ছেলে গোবিন্দ মন্ডল (১৯), আনন্দ মন্ডলের ছেলে চঞ্চল চন্দ্র মন্ডল (১৭) ও লালিত সরকারের ছেলে বিজয় সরকার (১৬)। এরআগে রবিবার (৫ জুন) দিবাগত রাতে বাসাইল ও সখীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

মৃত তৃষা মণি উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের আবু ভূইয়ার মেয়ে। তৃষা বাসাইল পৌর এলাকার শহীদ ক্যাডেট স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

জানা যায়, গত ২৬ মে বিকেলে তৃষার মা সম্পা বেগম তার ছেলে শুভকে স্কুল থেকে আনতে বের হন। এর কিছুক্ষণ পর তিনি বাড়িতে ফিরে দেখেন তৃষা সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে। পরে তৃষাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখান থেকে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। পরে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৮ মে বিকেলে তার মৃত্যু হয়। ওই সময় অভিযোগ উঠে তৃষাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে হত্যার উদ্দেশ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়।

গত ২৯ মে বিষয়টির উপর “৯ বছরের মেয়ে ধর্ষণ ও হত্যা” শিরোনাম করে প্রতিবেদন করেছিলো এটিভি সংবাদ। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জোরালোভাবে কাজ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

এ ঘটনায় প্রাথমিক পর্যায়ে বাসাইল থানা পুলিশ একটি অপমৃত্যু মামলা নেয়। এরপর ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যার আলামত পাওয়া যায়। এরপর গত ৪ জুন তৃষার বাবা আবু ভূইয়া বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী-২০০৩) এর ৯(৩) ধারায় মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি স্ব-উদ্যোগে পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব নেয়।

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সিরাজ আমিন জানান, তৃষা মণি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পূঁজোয় নাজ গান করত। তার নাচ দেখে বাড়ির আশপাশের গোবিন্দ মন্ডল, চঞ্চল চন্দ্র মন্ডল ও বিজয় সরকার আকৃষ্ট হয়। বিকৃত যৌন লালসা তাদের মনে পোষণ করে তৃষাকে বিভিন্ন সময় নানা কায়দায় উত্যক্ত করতো। প্রায় দুই মাস আগে তৃষা তার মা সম্পা বেগমের কাছে বিষয়টি খুলে বলে। কিন্তু আসামীরা বখাটে ও প্রভাবশালী হওয়ায় শিশুটির মা সম্পা তাদের কিছু বলতে সাহস পায়নি। আসামীরা তৃষার মায়ের অবস্থান অনুসরণ করতো। আসামীরা জানতে পারেন তৃষাকে বাড়িতে একা রেখে তার মা ওইদিন ছেলে শুভর স্কুল ছুটির পর তাকে এগিয়ে আনতে যায়। এই সুযোগে অভিযুক্ত তিনজন ঘরে গিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেচিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে শিশুটির মৃত্যু হয়।

তিনি আরও জানান, মৃত্যুর পর প্রাথমিকভাবে বাসাইল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। পরে ৪ জুন ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের পর হত্যার আলামত পাওয়া যায়। মামলাটি পিবিআই স্ব-উদ্যোগে তদন্তের জন্য গ্রহণ করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক খন্দকার আশরাফুল কবির তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামীদের গ্রেফতার করে। আসামীরা নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিবে বলে আশ্বাস দেয়। জবানবন্দি না দিলে মামলা তদন্তের স্বার্থে আদালতের রিমান্ড আবেদন করা হবে।

মৃত তৃষার মা সম্পা বেগম বলেন, আমার মেয়েকে যারা অমানবিকভাবে হত্যা করেছে, আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে ফাঁসি দাবি করছি। যাতে পরবর্তীতে আর কোনও মায়ের কোল এভাবে খালি না হয়।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :